জৌলুস কমলেও শতাব্দী পেরিয়েছে সা পরিবারের মেলা
পুতুল নাচ আর হয় না। যাত্রাপালাও বন্ধ। সময়ের সাথে সাথে যেন অনেকটাই সমঝোতা করেছে মেলাটি। পলেস্তারা খসা দেওয়াল, লোপাট হয়ে যাওয়া জানলার নকশা কাটা ফ্রেম অথবা পোড়ামাটির ক্ষয়াটে মডেলে সে কথারই প্রমাণ মেলে। তবে ১১৭ বছরের পুরনো পারিবারিক এই মেলায় আজও সমাগম হয় বহু মানুষের। শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রমোহন সা স্ট্রিটে শিবরাত্রি উপলক্ষে মেলা বসে। সা পরিবারের এই মেলা চলে এক মাস।
পরিরারের লোকজনের দাবি, পূর্বপুরুষ ক্ষেত্রমোহন সা গোদাবরিতে স্নান করতে গিয়ে একটি শিবলিঙ্গ পেয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেটি শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেটা ১৮৯৭ সালের কথা। ওই বছরেই তিনি মেলা শুরু করেন। মেলার নাম হয় শ্রী শ্রী শিবশঙ্কর জিউ কৃষি কলা শিল্প প্রদর্শনী ও মেলা। তবে পোশাকি নাম নয় দূর দূরান্তের মানুষের কাছে এই মেলা পরিচিত ‘ক্ষেত্র সা-এর মেলা’ হিসেবেই। আগে সঙতলার মেলাও বলা হত। তখন পুতুল নাচ হত। বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্রের কাহিনী অবলম্বনে বড় বড় পুতুল ছিল। চণ্ডীগান, যাত্রা সবই হত। মেলাপ্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে অনেকটা জায়গা জুড়ে দোকান বসত। নয় নয় করে শ’তিনেক অস্থায়ী দোকান।
মেলাবাড়ির চৌহদ্দি প্রায় আড়াই একর। সেখানে একটি পুকুর রয়েছে। আছে একাধিক মন্দির। প্রধান আরাধ্য দেবতা শিব। রাধাকৃষ্ণ, কালী, সূর্যদেব, অন্নপূর্ণা, গণেশ, রাম-লক্ষ্মণ-সীতা এবং মহাবীরেরও বিগ্রহ রয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে সুদৃশ্য পোড়ামাটির কাজ। সেই শৈলি এখন জীর্ণ। মডেলগুলি আগে কাচে ঢাকা থাকত। মেঝে ইটালিয়ান মার্বেলের। তা-ও ক্ষয়প্রাপ্ত। গত ৮ মার্চ থেকে মেলা চলছে। শিবরাত্রি, ঝুলন, দোল সব পার্বনই এখানে পালিত হয়।
ধর্মশালা, চিকিৎসক, অবৈতনিক বিদ্যালয় সবই ছিল এক সময়ে। বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসতেন। সাধুরা আসতেন। হাতি-ঘোড়া-উট নিয়েও আসতেন সাধুরা এমন শোনা যায়। দরিদ্রদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। এখন সে যুগের অবসান হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মেলার জৌলুষ কমেছে। গত বছর পনেরো ধরে নষ্ট হতে বসেছে নির্মাণ শৈলি। মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশপথে নহবত বসত। সেই জায়গাটিতে আজ বট, অশত্থ আর আগাছায় ভর্তি। মেলার পরিধিও কিছুটা ছোট হয়েছে। দোকানের সংখ্যা কমেছে।
শ্রীরামপুরের মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই পরিবারের তরফে আমাদের জানানো হলে আমরা সেখানে যেতে পারি। মেলায় সরকারি স্টলও দেওয়া যেতে পারে।”
এই পরিবারে কাজ করতেন, এমন ৪-৫ জন লোক ওই চৌহদ্দির এক কোণেই থাকতেন। ক্রমে ওই সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, এই মুহূর্তে বেশ কিছু পরিবার ওই জায়গায় থাকতে শুরু করেছেন। অসামাজিক কাজ চলছে ভিতরে। হেরোইন-গাঁজা-মদ থেকে সব ধরনের মৌতাত চলতে থাকে। ঠাকুরবাড়ির উপরে এক সময়ে ব্রাহ্মণেরা থাকতেন। ভোগের ঘর ছিল। সেখানেও লেগে থাকে উটকো লোকের আনাগোনা। মাস কয়েক আগে ওই চৌহদ্দিতে বোমা ফাটে। পুলিশ এসে কয়েকটি বোমা উদ্ধার করেও নিয়ে যায়।
বাড়ির বর্তমান সদস্য উত্তমকুমার বলেন, “ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক। প্রশাসন একটু নজর রাখুক। সরকারি সাহায্যও প্রার্থনীয়।” উত্তমকুমারবাবুর আর্তির মূলে রয়েছে আশঙ্কা। ওই জমিতে প্রোমোটারের নজর রয়েছে আশঙ্কা এমনটাই। উত্তমকুমারবাবু স্পষ্টই বলেন, “আমরা চাই না, এই জমিতে অন্য কিছু হোক। কিন্তু অবাঞ্ছিত লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে ওখানে। মাঝেমধ্যে নিজেরই ঢুকতে ভয় লাগে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.