সম্পাদকীয় ২...
ধর্ম-অধর্ম
দেবদেবীর পূজায় ব্যয় করা অর্থ বা দানকে করযোগ্য আয় হইতে ছাড় দিতে অস্বীকার করিয়া নাগপুরের আয়কর দফতর এবং সেই দফতরের ট্রাইবুনাল অনেককে বিপাকে ফেলিয়া দিয়াছে। এ দেশে বহু সম্পন্ন ব্যক্তি আছেন, যাঁহাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ, যাঁহাদের নাম কর-ফাঁকির তালিকাশীর্ষে নিয়মিত শোভমান, অথচ যাঁহারা বিভিন্ন পুণ্যস্থানে বিবিধ দেবতার মন্দিরে বিপুল অঙ্কের ‘দান’ করিয়া নাম, যশ, কর-ছাড়, এবং হয়তো-বা দেবতার আশীর্বাদও খরিদ করিয়া থাকেন। একটি দেবালয় পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের আবেদনের জবাবে আয়কর ট্রাইবুনাল বলিতেছে, এগুলি কোনও ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কাজকর্ম নয়, এবং এই বাবদে কোনও ছাড়ও মিলিবে না।
ট্রাইবুনাল এখানেই থামিয়া যায় নাই, ‘হিন্দু’ বলিয়া কোনও বিশেষ একটি ধর্ম বা সম্প্রদায় নাই, এমন কথাও উচ্চারণ করিয়া বসিয়াছে। ট্রাইবুনালের বক্তব্য, নিজেদের হিন্দু বলিয়া গণ্য করে এমন বিভিন্ন সম্প্রদায় আলাদা-আলাদা দেবদেবীর উপাসনা করে, আলাদা-আলাদা মতবাদ, ঐতিহ্য ও জীবনবীক্ষার অনুসরণ করে। এমনকী যাহারা কোনও দেবদেবীর পূজা করে না, সেই বস্তুতান্ত্রিক নিরীশ্বরবাদীদেরও নিজেদের হিন্দু ভাবিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা নাই। হিন্দুত্ব বাস্তবিকই একটি জীবনধারা। ইহুদি, ইসলাম কিংবা খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে হিন্দুত্বের মৌলিক পার্থক্যটুকুও এইখানেই প্রকট। ওল্ড টেস্টামেন্ট, বাইবেল কিংবা কোরানের মতো হিন্দুর কোনও অদ্বিতীয় ধর্মপুস্তক নাই, কোনও ‘একজন’ পয়গম্বর বা প্রফেট নাই। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, রামপূজক, গাণপত্য, এমনকী নিরীশ্বরবাদীকেও হিন্দুত্বে বরণ করিয়া লওয়ার পারস্পরিক আত্তীকরণ ঘটিয়াছে। ইহাই হিন্দুত্বের শক্তি।
আধুনিক ভারতে দুর্ভাগ্যবশত হিন্দুত্বের এই উদার অন্তর্ভুক্তির ঐতিহ্য সংকীর্ণবুদ্ধি সাম্প্রদায়িকতার কারবারিদের দ্বারা বিকৃত হইয়াছে। এই গোত্রের তাত্ত্বিকরা একটি বৃহৎ সমগ্রের অঙ্গীভূত করার হিন্দু ঐতিহ্যকে জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অপরিসর বৃত্তে সঙ্কুচিত করিয়া ফেলেন। সৃষ্টি হয় উগ্র, জঙ্গি, মারমুখী হিন্দুত্বের সংকীর্ণ অসহিষ্ণুতার। তাহার অনুগামী ‘স্বেচ্ছাসেবক’রা ত্রিশূল হস্তে ‘হর-হর-মহাদেব’ ধ্বনিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সন্ত্রস্ত করিতে পথে বাহির হইয়া পড়ে। সহিষ্ণুতা, উদারতা ও অন্তর্ভুক্তির জীবনচর্যা ক্রমে বিধর্মীদের আক্রমণের, বিতাড়নের ‘ধর্ম’ হইয়া ওঠে। ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গায়, ১৯৯২-এর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডে, ২০০১-এর গুজরাত দাঙ্গায় পরমত-অসহিষ্ণুতার যে করাল মুখব্যাদান দেখা গেল, তাহা কি হিন্দুত্ব? হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারবারিরা হয়তো তেমনটাই মনে করেন। কিন্তু একশো কোটি হিন্দু কিছুতেই তাহা মনে করেন না। ইহাই এখনও ভরসার কথা। ধর্মীয় আচার আচরণ এবং রাজনীতির উদ্দেশ্য সাধনে ধর্মকে ব্যবহার করিবার প্রবণতা দুইটিকে আলাদা করা জরুরি। আয়কর ট্রাইবুনালের বক্তব্য পরোক্ষে এই বিষয়টিতেই আলো ফেলিয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.