|
|
|
|
বৈঠক মনমোহন-চিদম্বরমের সঙ্গে |
প্যাকেজ আদায়ে মমতাকেও পাশে চাইছেন নীতীশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রের থেকে আর্থিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পাশে চাইছেন নীতীশ কুমার।
আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে নিজের রাজ্যের জন্য তো বটেই, আর্থিক সংকটে জেরবার অন্যান্য রাজ্যের জন্যও এক নয়া আর্থিক নীতি প্রণয়নের দাবি তোলেন তিনি। বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ডের মতো পিছিয়ে থাকা রাজ্যের জন্যও আর্থিক প্যাকেজ প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন নীতীশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এমনকী ঝাড়খণ্ডের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে নীতীশ জানান, এ জন্য প্রয়োজনে একটি পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট গড়তেও তিনি প্রস্তুত।
পরে এক সাক্ষাৎকারে নীতীশ আনন্দবাজারকে বলেন, “মমতা রাজ্যের আর্থিক সংকটের জন্য যে ভাবে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়ছেন, তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিছু দিন আগে কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সে দিন পটনা থেকে কলকাতা পৌঁছেও তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি আমার জন্য মহাকরণে অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু সে দিন সন্ধ্যায় তাঁরও দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি ছিল। ফলে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। আমি নিজে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবকে ফোন করে এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলাম।” এনডিএ-র প্রাক্তন জোটসঙ্গী সম্পর্কে নীতীশের বক্তব্য, “মমতা যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন আমি নিজে রেল ভবনে গিয়ে বিহারের জন্য দরবার করেছিলাম। তিনি যথাসাধ্য বিহারের জন্য সাহায্য করেছিলেন। এখন সময় এসেছে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের একজোট হওয়ার।” |
|
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নীতীশ কুমার। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও মন্টেককে আজ নীতীশ বুঝিয়েছেন, যোজনা বরাদ্দে বা বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র যে টাকা দেয়, তা রাজ্যের প্রাপ্য। কিন্তু যে হেতু দীর্ঘ দিন ধরে এই রাজ্যগুলি বঞ্চিত হয়েছে, তাই অতিরিক্ত অর্থ সাহায্য করতে হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নীতীশ বলেন, “মাসুল সমীকরণ নীতির ফলে পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এখন এত দিন ধরে যে রাজ্যগুলি আর্থিক ভাবে উন্নয়নশীল, তাদের সঙ্গে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির দূরত্ব কমাতে তৎপর হোক কেন্দ্র। দেশের সুষম আর্থিক বিকাশের জন্য পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্য নীতি তৈরি করা হোক, যাতে রাজ্যগুলির মধ্যে অসাম্য দূর হয়। এই লড়াইয়ে পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীরা এক জোট হয়ে কাজ করতে পারে।” তাঁর যুক্তি, “রাজ্যওয়াড়ি ওই অসাম্য দূর হলে বিভিন্ন রাজ্যে যে হিংসা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন রয়েছে, তা-ও প্রশমিত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে নীতীশ বলেন, “দু’জনেই আশ্বাস দিয়েছেন, বিহারের দাবি কেন্দ্র বিবেচনা করবে।” বিহারকে কী ভাবে সাহায্য করা হবে, সেটা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি নীতীশ। বলেন, “কেন্দ্র বিশেষজ্ঞ কমিটি করবে, না চিদম্বরম নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানি না। আপাতত বিহারের দাবি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।”
নীতীশের সফরকে কেন্দ্র বিরোধী বলতে নারাজ তাঁর দল। জেডিইউ নেতাদের বক্তব্য, এক দিকে নীতীশ বুঝিয়েছেন, শুধু মোদী নন, বিজেপিকে ভাবতে হবে তাঁকে নিয়েও। আবার অন্য দিকে কংগ্রেসের সামনে তাঁর সমর্থনের টোপ ঝুলিয়ে রেখেছেন। আর এটা করে দুই শিবিরেই দর কষাকষির রাস্তা খুলে রেখেছেন। তা ছাড়া নীতীশ বিলক্ষণ জানেন, মমতা বা নবীনের কাছে মোদীর তুলনায় তিনি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। সেই পথও খুলেছেন তিনি। এখন প্রশ্ন, সাফল্য আসবে কোনও পথে? |
|
|
|
|
|