বিরোধীদের চাপে পিছু হটল কেন্দ্র
সহবাসে সম্মতির বয়স সেই আঠারোই
বিরোধী দলগুলির প্রবল চাপের মুখে যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটল সরকার। গত সপ্তাহেই পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে ঐকমত্য হয়, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিলে সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা হবে। আগামী কাল বিলটি পেশ হবে লোকসভায়। তার আগে এ দিন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথ। বিজেপি, সমাজবাদী পার্টির সাংসদদের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত সরকার আজ জানিয়ে দিল, বিলে বয়স কমানো হচ্ছে না, তা আঠারোই রাখা হবে।
পাশাপাশি, মহিলাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত লুকিয়ে দেখা, ছবি তোলা, বা দীর্ঘদিন মহিলাদের অনুসরণ করা, তাঁদের গায়ে হাত দেওয়ার মতো অপরাধে শাস্তির বিষয়টিও আজকের সর্বদলের পর কিছুটা গুরুত্ব হারাল বলে মত বিশেষজ্ঞদের। দিল্লির বাসে তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনার পর ধর্ষণে কড়া শাস্তির সুপারিশ করেছিল বর্মা কমিটি। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ জারি করা অর্ডিন্যান্সে এবং যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিল, দু’জায়গাতেই এই ধরনের অপরাধে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। এ দিন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে, এই রকম অভিযোগ উঠলে অভিযুক্তের উপরই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সমস্ত দায় চাপানো হবে না। তা ছাড়া মহিলাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা বা তাদের পিছু নেওয়ার মতো অপরাধ যদি কেউ প্রথম বার করেন, সে ক্ষেত্রে জামিনের সুযোগ তাঁকে দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়েছে।
বদল হয়েছে আরও একটি ক্ষেত্রেও। আগে বিলে ছিল, প্রকাশ্য স্থানে কোনও মহিলাকে নগ্ন করার চেষ্টা করা হলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে কোনও জায়গাতেই এই চেষ্টা অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
নয়াদিল্লিতে সর্বদল বৈঠক। সোমবার। ছবি: পিটিআই
যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স ষোলো বছর ছিল অবশ্য গত তিরিশ বছর ধরেই। গত মাসে যখন এ নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হল, সম্মতির বয়স বাড়িয়ে করা হয়েছিল আঠারো। যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিলে ফের তা কমিয়ে ১৬ করা হয়। বয়স কমানোর পিছনে যুক্তি ছিল, ১৬-১৭ বছর বয়সে যদি কেউ তার বান্ধবীর সম্মতিতেও যৌন সম্পর্কে যায়, তা হলে তাদের দু’জনের মত গ্রাহ্য হবে। আর আইনে যদি সম্মতি জানানোর বয়স ১৮ থাকে, তা হলে দু’পক্ষের সম্মতি থাকলেও তা অগ্রাহ্য করে ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে ধর্ষণের। ফৌজদারি আইনে এই রদবদলে অপব্যবহার বেড়ে যাবে, এ দিন সর্বদল বৈঠকে এই আশঙ্কাই প্রকাশ করে বিজেপি ও সপা। তাদের দাবি, ভারতে বিয়ের বয়স যখন আঠারো, সহবাসে সম্মতির বয়সও তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই করা উচিত।
বিজেপি নেত্রী নাজমা হেপাতুল্লা বলেন, “আঠেরোর থেকে কম বয়সী কেউ ধর্ষণের অভিযোগে ধরা পড়লে বিচার হবে নাবালক আইনে। তা হলে ১৬ বছরের নাবালক বা নাবালিকা কী করে সহবাসে তার সম্মতি জানাতে পারে?” সমাজবাদী পার্টির তরফে বলা হয়েছে, ধর্ষণ রুখতে কড়া আইনের পক্ষে তাঁরা সবাই। কিন্তু যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স কমিয়ে আনার প্রস্তাব নিশ্চয়ই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির।
আজকের বৈঠকের পর সিপিএম-সিপিআই মতবিরোধও এসে পড়ে প্রকাশ্যে। সিপিএমের তরফে বলা হয়, বয়স কমিয়ে ষোলো করা হলে তাদের আপত্তি নেই। খালি আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, খেয়াল রাখতে হবে তা।
কিন্তু সিপিএমের একেবারে উল্টো মত সিপিআইয়ের। দলের সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি বলেন, দেশে বাল্য বিবাহ এখনও বড় সমস্যা। অল্প বয়সেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন বহু তরুণী। মা ও শিশু মৃত্যু বেড়ে চলার কারণও এটাই। এই অবস্থায় সহবাসে সম্মতির বয়স কমানো হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলেই আশঙ্কা তাঁর।
যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিল নিয়ে অবশ্য সরকারের পাশেই দাঁড়িয়েছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। বসপা নেত্রী জানিয়েছেন, বিলটির বিতর্কিত অংশ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ তো রয়েইছে। তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, যে আইনই শেষ পর্যন্ত তৈরি হোক না কেন, তার বাস্তবায়নে রাজ্যের বিশেষ ভূমিকা থাকে। তাই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোনো উচিত কেন্দ্রের।
অর্ডিন্যান্সটির মেয়াদ ফুরোবে আগামী ৪ এপ্রিল। এ দিকে চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকেই বাজেট অধিবেশনের সাময়িক বিরতি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিলটিতে প্রয়োজনীয় রদবদল ঘটিয়ে আইনে পরিণত করা যায়, সেই চেষ্টায় খামতি রাখছে না কংগ্রেস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.