সরকারি বা বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট বা লজে পুরোদস্তুর প্রশিক্ষিত কর্মীদের সংখ্যা কম থাকায় পর্যটকদের অনেক সময় পরিষেবা নিয়ে সমস্যা পড়তে হয়। পাশাপাশি, বহুক্ষেত্রে কর্মীদের ব্যবহার, কথাবার্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিব্রত হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যে সরকারি খরচে প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরির কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়। এরজন্য তৈরি করা হয় সুনির্দিষ্ট প্রকল্পও। ‘হুনর সে রোজগার তক’ নামের ওই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। সোমবার শিলিগুড়ির সরকারি অতিথি নিবাস মৈনাকে ৫০ জনকে তরুণ তরুণীকে নিয়ে প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের জয়েন্ট ডাইরেক্টর সুনীল অগ্রবাল-সহ আধিকারিকেরা।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, আগামী দেড় মাস ধরে ওই ৫০ জনকে ‘হাউস কিপিং’ সংক্রান্ত খুটিনাটি শেখাবেন বিশেষজ্ঞরা। হাতেকলমেও শেখানো হবে কাজকর্ম। রবিবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা অবধি প্রশিক্ষণ শিবির চলবে। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ছাড়াও শিবিরের শেষে প্রত্যেককে সাম্মানিক দেড় হাজার টাকা করেও দেওয়া হবে। আর মিলবে সরকারি শংসাপত্রও। তবে তারজন্য একটি পরীক্ষাও হবে। এই শংসাপত্র তাঁদের সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় চাকরির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে বলে অফিসারদের আশা। |
পর্যটন সংক্রান্ত কর্মশালা শুরু হল শিলিগুড়িতে। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
হাউস কিপিং ছাড়া ফুড প্রোডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস নিয়ে ছয় থেকে আট সপ্তাহের আলাদা শিবির হবে।
জয়েন্ট ডাইরেক্টর সুনীলবাবু বলেন, “সম্প্রতি পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী শিলিগুড়িতে এসে দ্রুত প্রকল্পটি চালুর কথা বলেছিলেন। সেই মোতাবেক তা চালু করা হল। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর আগ্রহীরা নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। এখনও অবধি আমরা প্রায় ৩৫০ আবেদন পেয়েছি। ৫০ জনকে দিয়ে এদিন প্রকল্পটি শুরু হল। এর পরে বাকিদের নিয়ে তিনটি বিভাগেই প্রকল্পটি চালু হবে।” পরবর্তীকালে সরকারি তো বটেই বেসরকারি সংস্থায় প্রশিক্ষিতরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে আমাদের আশা। তিনি জানান, কোর্সের শেষে শংসাপত্র প্রাপকদের নাম, ঠিকানা আমাদের সরকারি ওয়েবসাইটে রাখার ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা চলছে।
শিলিগুড়ির একটি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার সম্রাট সান্যাল বলেন, “পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসায় বরাবর প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব রয়েছে। এই ধরণের সরকারি উদ্যোগে ঘাটতি অনেকটাই মিটতে পারে। প্রশিক্ষিতদের পর্যটন দফতরে তালিকা থাকলে কোনও সংস্থায় সহজেই প্রশিক্ষিত কর্মী পেয়ে যাবেন। এতে পরিষেবার মানও বাড়বে।”
দফতর সূত্রের খবর, কোর্সগুলির জন্য শিলিগুড়ির পর্যটন দফতরের আধিকারিক উদয় পাঠককে কেন্দ্রীয় সরকার চণ্ডীগড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দার্জিলিঙের ফুড ক্রাফট ইনস্টিটিউট থেকেও বিশেষজ্ঞদের আনা হচ্ছে। নূন্যতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ এবং ১৮ থেকে ২৮ বছর বসয়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়ির পাশাপাশি সল্টলেক, ডায়মণ্ড হারবার, হাওড়া, বিষ্ণুপুর এবং মালদহে প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিবানী পাল, মান্টি দাস, সর্বানী পাল, প্রশান্ত ঘোষ, আকাশ সরকার, শুভম দাসেরা বলেন, “সরকারি উদ্যোগে এই ধরণের স্বল্পমেয়াদি কোর্স করার পর চাকরি ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।” |