আর্থিক দুর্নীতি, শিক্ষককে অপমান করা-সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তাই পদত্যাগের দাবিতে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ। সোমবার ঘটনাটি ঘটে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মহাবিদ্যালয়ে। অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ গঙ্গাধর ঘোষ। কলেজ পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা বলেন, “ওই বিষয়ে কিছু জানি না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেস্থ এই কলেজটি সরকারি অনুমোদন পায়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে গঙ্গাধর ঘোষকে নিয়োগ করা হয়। পঠনপাঠনের জন্য সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্থানীয় স্কুলের বাংলার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জগদীশ রায়-সহ ৭ জনকে নিয়োগ করা হয়। সম্প্রতি জগদীশবাবু কিছু দিনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লেও নির্ধারিত দিনগুলিতে তিনি কলেজে ক্লাস করেছেন। অভিযোগ, এর পরেও অধ্যক্ষ অন্যান্য শিক্ষকদের দু’মাসের বেতনের অনুমোদন দিলেও বেতন তালিকায় জগদীশবাবুর নাম সবুজকালি দিয়ে কেটে দেন। জগদীশবাবুর অভিযোগ, “এলাকায় একটি বড় কলেজ গড়ে উঠবে বলেই তৎকালীন কর্মকর্তাদের অনুরোধে স্বেচ্ছায় পাঠদানে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু যখনই শুনলাম এক জন কর্মীকে দিয়ে আমাকে কলেজে যেতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন খুব অপমানিত বোধ করেছি।” যদিও শিক্ষাকর্মী শ্রীহরি পাল দাবি করেন, “অধ্যক্ষের নির্দেশ মতো জগদীশবাবুকে বেতন না দিলেও মানবিকতার খাতিরে ওঁনাকে কলেজে না আসার কথা বলতে পারিনি।” |
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল থেকে পদত্যাগের দাবিতে অধ্যক্ষকে অফিস ঘরে তালা বন্ধ করে রাখেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিতে বাধ্য হন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় সকাল ১০টা নাগাদ পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। বিক্ষোভকারী তাপস বন্দোপাধ্যায়, কেশব ভাণ্ডারী, গৌরাঙ্গ ধীবর, প্লাবন মণ্ডলদের অভিযোগ, “শুধু শিক্ষককে অপমান করাই নয়, অধ্যক্ষ বিনা টেন্টারে কলেজের ঘর নির্মাণের মালপত্র-সহ অন্যান্য সামগ্রী কিনে মোটা টাকা পকেটে পুরেছেন। আর্থিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পরিচালন সমিতিকে অন্ধকারে রেখে দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন। একই ভাবে শিক্ষিকা হিসেবে নিজের এক আত্মীয়াকে ঢুকিয়েছেন।”
ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, নিজের পকেট ভরানোর জন্যই অন্যান্য কলেজের তুলনায় ভর্তি, শারীরশিক্ষার পোষাকের জন্য কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে। কলেজ পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সহকারি সম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, “অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে আমরা কমিটিতে থাকাকালীন বহু বার সরব হয়েছি। কিন্তু কমিটির একাংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁকে আড়াল করেছেন। তখন আমরাই শিক্ষা দফতরের কাছে কমিটি গঠনের দাবি জানাই। সেই মতো মাস ছয়েক আগে নতুন কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির কাছেও বার বার দুর্নীতির কারণে অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
অধ্যক্ষ অবশ্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ওই শিক্ষককে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিতে বলেছিলাম মাত্র। সাময়িকভাবে বেতন আটকে রাখতে বললেও কলেজে না আসার জন্য কাউকে কিছু বলতে বলিনি।” কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তপন ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও শিক্ষকের বেতন আটকে রাখা বা তাকে কলেজে আসতে না বলার এক্তিয়ার অধ্যক্ষের নেই। কেন এমন হল খোঁজ নিয়ে দেখছি।” তিনি জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুরনো কমিটি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|