স্কুলে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকেরা গেলেন তৃণমূলের সম্মেলনে
দৃশ্য ১: সুকবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সময় দুপুর দুটো। তালা ঝুলছে স্কুলের গেটে। বাইরেই বাড়ির লোকের জন্য অপেক্ষা করছিল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা পাটুয়া। স্কুল কেন বন্ধ? মুখে একগাল হাসি এনে ছোট্ট মেয়ে বলে, “স্যার-দিদিমণিরা বলেছেন, ওদের মিটিং আছে। তাই আজ আমাদের ছুটি!”
দৃশ্য ২: ইলামবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সময় দুপুর দেড়টা। এখানেও তালা স্কুলের গেটে। প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার দাস-সহ সকলেই গিয়েছেন মিটিংয়ে।
শুধু এই দু’টিই নয়, সোমবার দুপুরের পরে ইলামবাজার ব্লক এলাকার ১৩৪টি প্রাথমিক স্কুলের একটা বড় অংশে এমন দৃশ্যই ধরা পড়ল। অভিযোগ, এ দিন ইলামবাজার কমিউনিটি হলে শাসক দল তৃণমূলের সম্মেলনে যোগ দিতেই ছুটেছিলেন ওই স্কুলগুলির প্রায় ৭০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। যার জেরে বেলা ১টার পর থেকে বেশির ভাগ স্কুলেই আর পঠনপাঠন হয়নি। গত ১০ মার্চও বারাসত এলাকার ২০০টি প্রাথমিক স্কুলে ছুটি দিয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষক যোগ দিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। সেই অনুষ্ঠান অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দলের ছিল না। সরকারের ডাকে স্কুল বন্ধ করে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াকে ‘কাজে হাজিরা’ হিসাবেই দেখানোর সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ইলামবাজারের একাধিক স্কুলে সোমবার দেখা গেল এই চিত্রই। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
ইলামবাজার ব্লকের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য এই ‘বিশেষ অনুষ্ঠান’-এর আহ্বায়ক তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের দাবি, “সাড়ে ৩টে নাগাদ সভা শুরু হয়েছে। আপনারা অপপ্রচার করছেন।” কিন্তু ঘটনা হল, দুটোর অনেক আগে থেকেই শিক্ষকেরা কমিউনিটি হলের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেন। পরে আড়াইটের পর থেকে হলের সিটে বসতে শুরু করেন শিক্ষকেরা। সম্মেলন যখন শুরু হল ঘড়িতে তখন ৩টে। ফলে খয়েরবুণি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইলামবাজার ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকম্বা প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা পায়ের নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় সব ক’টা স্কুলেই কিন্তু দুটোর আগেই তালা ঝুলল।
তৃণমূলের ওই অনুষ্ঠানেই চারটের দিকে মঞ্চে এলেন খোদ জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ। তৃণমূলের এই সম্মেলনে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শিক্ষকদের অনেক সময় নানা অভাব অভিযোগ থাকে। সেগুলো জানতেই আমার এখানে আসা।” কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি করে এ ভাবে রাজনৈতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া কি ঠিক? উত্তরে রাজাবাবু বলেন, “নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ স্কুলে ছুটি দিয়ে সভায় এসেছেন বলে আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।” রাজনৈতিক সম্মেলনই শিক্ষকদের সমস্যার কথা জানার একমাত্র মঞ্চ কিনা, সভাপতি অবশ্য সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ দিকে সম্মেলনে উপস্থিত বহু শিক্ষকই আবার জানালেন তাঁরা স্বেচ্ছায় এখানে আসেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাথমিক শিক্ষক বললেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জনে জনে স্কুলে এসে সম্মেলনে আসার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। এ তো এক ধরনের ফতোয়া জারি। শাসকদলের সেই ফতোয়া উপেক্ষা করে, কীভাবে স্কুল চালাই বলুন তো?” আবার হলে উপস্থিত ইলামবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল গামা বলেই ফেললেন, “কোন অধিকারে একটি দলীয় কর্মসূচির জন্য স্কুল বন্ধ করে আমাদের ডাকা হয়েছে জানি না। না এলে শাসক দলের কোপে পড়ব। এলে অভিভাবকদের কোপে পড়ব। আমরা যাব কোথায়?” অন্য দিকে, নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করে সুকবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিত্যরঞ্জন রায় বলেন, “হ্যা, ছুটি দিয়েছি। সভায় এসেছি। এর বেশি কিছু আর বলতে পারব না।”
ব্যতিক্রম কি ছিল না? দারন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা সম্মেলনে ঢুকলেন পঠনপাঠনের শেষ হওয়ার পরেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.