নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
ছুটির বিকেলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিল বছর তেরোর কিশোর। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ম্যাচ বাতিল। তাই ফেরার পথে আশ্রয় নেয় বন্ধ দোকানের সামনে ছাউনিতে। সেখানে দাঁড়ানোই কাল হল। নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ি এসে ধাক্কা মারে ওই দোকানেই। রবিবার বিকেলে আমরাই মোড়ের কাছে কিছু বোঝার আগেই ওই গাড়ির চাকায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয় দুর্গাপুরের রহিমপথের সৌরভ পালের।
রবিবার সৌরভের মৃত্যুর পরে ধুন্ধুমার বাধে আমরাইয়ে। জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ইটের আঘাতে জখম হন এক পুলিশকর্মী। শেষ পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে পুলিশ। লাঠিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ রবার বুলেট ছোড়া ও লাঠি চালানোর কথা মানেনি। রবিবার রাতেই পুলিশের উপরে হামলায় জড়িতদের ধরতে আমরাইয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সোমবার সকাল পর্যন্ত ২১ জনকে ধরা হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমন কয়েক জনকে ধরা হয়েছে যাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত ছিলেন না। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব অবশ্য বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে ওই ২১ জনকে ধরা হয়েছে। আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে।” সোমবার ধৃতদের আদালতে পাঠানো হলে বিচারক ১৮ জনকে ১৪ দিন জেল-হাজতে এবং তিন জনকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ঘটনার পরপর মৃত কিশোরের নাম-পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। রবিবার রাতে তা জানা যায়। পুলিশ জানায়, আমরাই হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৌরভের বাড়ি ঝান্ডাবাগে। কিন্তু যমজ ভাই গৌরবের সঙ্গে সে থাকত রহিমপথে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সৌরভের বাবা হরিপদ পাল জানান, এ দিন বিকেলে গৌরব টিউশনে যায়। সৌরভ চলে যায় একটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে। তার পরেই ঘটে দুর্ঘটনা। সোমবার ওই এলাকায় যান কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায়। তিনি বলেন, “পরিবারটি দুঃস্থ। তাঁরা যাতে সরকারি সাহায্য পান, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাব।” পুলিশ জানায়, যে গাড়িতে সৌরভ চাপা পড়ে, তাতে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বীরভূম পুলিশলাইনের ওই গাড়িটি যিনি চালাতেন, তিনি থাকেন আমরাই এলাকায়। সম্ভবত ঘটনার সময়ে গাড়িটি তিনি চালাননি। অনভিজ্ঞ কেউ সেটি চালাচ্ছিলেন। তাই ফাঁকা রাস্তা সত্ত্বেও এমন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির চালক-সওয়ারিদের খোঁজ চলছে। |