ঘরে বসেই জানা যাচ্ছে গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা, সরবরাহ ও ঘাটতির তথ্য। কোন পাড়ায় ট্রান্সফর্মার
খারাপ হয়েছে, কোন ফিডার লাইন দিয়ে কোন ঠিকানায় বিদ্যুৎ পৌঁছয়—এক বার মাউস ক্লিক করলেই কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে উঠছে সেই তথ্য। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ বন্টন পরিকাঠামোর এই ভৌগোলিক মানচিত্র (জিআইএস) গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে।
কম পক্ষে ৩০ হাজার মানুষ বাস করেন, রাজ্যের এমন ৬১টি মাঝারি ও ছোট শহরকে তথ্যপ্রযুক্তি-নেটওয়ার্কের আওতায় এনে তৈরি হয়েছে তথ্যভাণ্ডার। যার ফলে বিদ্যুৎ বন্টনে ক্ষতির পরিমাণ কমবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় অনুদানের টাকায় এই
রাজ্যেই প্রথম জিআইএস ব্যবস্থা পুরোমাত্রায় চালু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎ দফতরের।
কিন্তু এতে গ্রাহকের সুবিধা কোথায়?
বিদ্যুৎ কর্তারা জানাচ্ছেন, এর ফলে কোথাও ট্রান্সফর্মার বা ফিডার ‘ট্রিপ’ করে গেলে বা সাবস্টেশনে কোনও যান্ত্রিক বিভ্রাট দেখা দিলে অফিসে বসেই সংশ্লিষ্ট জায়গাটি অনেক দ্রুত চিহ্নিত করে ফেলা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ কর্মীরাও সহজে জেনে যাচ্ছেন, লাইন কোথায় খারাপ হয়েছে। পাশাপাশি, কোনও হাই-ভোল্টেজ লাইনে (কল-কারখানা) বিদ্যুৎ চুরি হলে নানা সাঙ্কেতিক চিহ্নের মাধ্যমে তা জানা যাচ্ছে অফিসে বসেই। জিআইএস তৈরি হওয়ায় ওই শহরগুলির প্রতিটি গ্রাহকের
বিদ্যুতের চাহিদা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য রয়েছে কম্পিউটারে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে বলেন, “প্রকল্পটি সাফল্যের সঙ্গে যে আমরা করতে পেরেছি, এটা যোজনা
কমিশনই জানাচ্ছে। আর এই ব্যবস্থায় ভবিষ্যতে উপকৃত হবেন রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকরাই।”
বিদ্যুৎ বণ্টনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক এই স্বয়ংক্রিয় তথ্যভাণ্ডারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছে ১৬০ কোটি। বাকি ৩১ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। ওই বিদ্যুৎ কর্তার দাবি, এটি মূলত কেন্দ্রীয় প্রকল্প। এই কারণে প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে কেন্দ্র। প্রতিটি রাজ্যেই প্রকল্পটি হওয়ার কথা। ওই বিদ্যুৎকর্তার দাবি, পশ্চিমবঙ্গে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। গুজরাতে কাজ কিছুটা এগিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলি এখনও শুরুই করেনি।
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, হলদিয়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদহের মতো শহরগুলি জিআইএস-এর আওতায় এসেছে। হাতে-কলমে কাজ শিখতে বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র-সহ কিছু রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ কর্মীরা ঘুরে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। কাজ দেখে গিয়েছেন যোজনা কমিশনের সদস্যরাও।
ওই বিদ্যুৎ কর্তা জানান, ট্রান্সফর্মার, ফিডার, সাবস্টেশন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ জাংশনগুলিতে তারবিহীন বিশেষ প্রযুক্তি-মিটার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসিয়েই বিস্তারিত তথ্য জোগার করা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট শহরের প্রতিটি পাড়ার প্রতিদিনের বিদ্যুৎ সরবরাহের তথ্য জানা যাচ্ছে।
দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারকেই এখন ‘পাখির চোখ’ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারই অঙ্গ হিসাবে এই ‘রিস্ট্রাকচার্ড অ্যাকসিলারেটেড পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন রিফর্মস প্রোজেক্ট’ নামে এই প্রকল্প। কেন্দ্র মনে করছে, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই ব্যবস্থা চালু করতে পারলে অনেক বেশি পেশাদারিত্বের সঙ্গে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালনা করতে পারবে। কমাতে পারবে বিদ্যুৎ বণ্টনের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণও। |