রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ না-করার সিদ্ধান্তে অনড়। অথচ শিল্পের জন্য জমি লাগবেই। এই অবস্থায় শিল্প বা সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে জমি জোগাড় করতে ভূমি নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করলেন অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। তিনি চান, ওই কমিশনই সরকার, শিল্পপতি এবং জমিদাতাদের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করুক। জমি জোগাড়ে সহায়তা করুক। পশ্চিমবঙ্গের ভূমি সমস্যা এবং কিছু নতুন ভাবনা প্রসঙ্গে শনিবার এক বক্তৃতায় তাঁর এই মত জানান ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপক। তবে শিল্প ছাড়া যে রাজ্যের হাল আরও সঙ্গিন হবে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই তাঁর।
বিদ্যুৎ, টেলিফোন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরেই নিয়ন্ত্রণ কমিশন কাজ করছে। কিন্তু জমির ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবের বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। ওই বক্তৃতার অন্যতম শ্রোতা রাজ্যের প্রাক্তন ভূমি কমিশনার তথা বর্তমানে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রসাদরঞ্জন রায় বলেন, “ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। ওঁর সঙ্গে বিশদে কথা না-বলে এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না। তবে আপাত ভাবে বলা যায়, সব দিক ভেবে এই প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে হয় না।” |
সল্টলেকের ইজেডসিতে এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো আবার জমির অভাবে রাজ্যে শিল্প আসছে না এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “সরকার জমির ব্যাপারে যে নীতি নিয়েছে, তা থেকে সরে আসার কোনও কারণ নেই। যাঁরা নানা রকম তত্ত্বের কথা বলছেন, তাঁরা আগ্রহী শিল্পপতিদের নিয়ে আসুন। জমি দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।”
এ দিন সমর সেন স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক বর্ধন বলেন, সত্তরের দশকের ভূমি সংস্কারের পথ ধরে রাজ্যে এখন জমির জোত ক্রমশ ছোট হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা। চাষে উৎপাদনশীলতাও কমতে শুরু করেছে। যার পরিণতি চাষকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে অপারগ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি।
তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার একমাত্র পথ শিল্পায়ন। তাঁর মতে, এই শিল্প অবশ্যই শ্রমনির্ভর বড় শিল্প। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দিয়ে যথার্থ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে না। তিনি মনে করেন, রাজ্যে সম্প্রতি
যে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, গুন্ডামির ঘটনা শোনা যাচ্ছে, তার নেপথ্যের অন্যতম কারণ হল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকা।
এ ক্ষেত্রে দল কোনও ব্যাপার নয়। আগে যারা সিপিএমের গুন্ডা ছিল, তারাই এখন তৃণমূলের গুন্ডা। ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে তারাও বদলে যাবে। কিন্তু যদি কর্মসংস্থান না হয়, তাদের হাতে কাজ দিতে না পারা যায়, তা হলে অসামাজিক কাজকর্ম চলতেই থাকবে।
অধ্যাপক বর্ধনের এ দিনের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ।
তিনি মনে করেন, চাষিদের যেমন বাজার দরে জমির দাম দেওয়া উচিত, তেমনই জমির ভবিষ্যৎ মূল্য ধরে নিয়ে পেনশন প্রকল্পের আওতায় আনা উচিত। পেনশন প্রকল্পে শিল্পপতিদের কাছ থেকে অনুদান নেওয়ার পাশাপাশি শিল্প স্থাপনের ফলে যাঁরা উপকৃত হবেন, তাঁদের কাছ থেকেও কর নেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। |