পঞ্চায়েত ভোটে বুথপিছু অন্তত দু’জন সশস্ত্র পুলিশ চেয়ে রাজ্য প্রশাসনকে
বিপাকে ফেলে দিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
কারণ তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, কোনও ভাবেই হোমগার্ড, গ্রিন পুলিশ বা ওই ধরনের চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের কোনও ভাবেই বুথ পাহারায় লাগানো যাবে না। এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পরে একাধিক ডিএম-এসপি-র প্রশ্ন, রাজ্যে এত পুলিশ কোথা থেকে মিলবে?
মহাকরণ সূত্রের খবর, এর মধ্যে পাঁচটি নতুন কমিশনারেটে ৫ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। জঙ্গলমহল থেকে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজারের মতো ভিলেজ পুলিশ। এর পরেও আরও ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই জেলাগুলিতে তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করার নির্দেশ গিয়েছে মহাকরণ থেকে। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের বক্তব্য শুনে মাথায় হাত পুলিশ সুপারদের।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা
বলেন, “বুথ পাহারায় মূলত কনস্টেবলদেরই মোতায়েন করা হয়। রাজ্যে সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার কনস্টেবল আছে। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথ হবে ৫৭ হাজারের কিছু বেশি। ফলে তর্কের খাতিরে ভোটের দিন সবাই হাজির থাকবে ধরে
নিলেও ১৩ হাজার পুলিশের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।”
অধিকাংশ এসপি-র বক্তব্য, থানার কাজ চালাতে ও আইন-শৃঙ্খলা সামাল দিতেও পুলিশ লাগে।
এ দিন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এই সমস্যার কথা তোলেন অধিকাংশ ডিএম-এসপি। তাঁদের বক্তব্য, কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রতি বুথে দু’জন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করতে গেলে জেলাপিছু গড়ে আরও ৩-৪ হাজার সশস্ত্র পুলিশ লাগবে।
এত পুলিশ তাঁরা কোথায় পাবেন? একাধিক পুলিশকর্তা জানান, যে সব ভোটকেন্দ্রে ৪-৫টা বুথ, সেখানে কনস্টেবল কমিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর (এএসআই) মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু তাতেও কি ঘাটতি মেটানো যাবে?
সংশয়ে পুলিশকর্তারাই। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “ভোটের দিন ভিন রাজ্যের পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। কমিশন যদি রাজি হয়, তা হলে ওই পথে হাঁটতে পারে রাজ্য।”
কিন্তু মীরাদেবী এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই ভোট করাতে চান তিনি। এ দিনের বৈঠকের পরে কমিশন-সচিব তাপস রায় বলেন, “এ দিনের আলোচনায় ভোটের দিনে নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল। বেশ কয়েক জন এসপি সংশ্লিষ্ট জেলায় ভোট করাতে কত পুলিশ লাগবে, সে তথ্য জমা দেননি। তাঁদের সেই তথ্য দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।” এ দিনের বৈঠকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে কমিশন জানতে চায়, প্রার্থীরা যাতে নিরাপদে ও নির্ভয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানই বা কোন পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে গ্রামে-গঞ্জে শান্তি বজায়
রাখতে এসপি-রা কী পরিকল্পনা করেছেন, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানতে চায় কমিশন।
জেলাশাসকদের কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, ১৮ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এ দিনের বৈঠকে কমিশনের কাছে ভোটের দিন ঘোষণা থেকে ফল বেরনো পর্যন্ত স্কুল পরিচালন কমিটির নির্বাচন স্থগিত রাখার আর্জি জানান বর্ধমানের
পুলিশ সুপার। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। |