পাঁচ ভাই, এক বোন
দের বাবা বিরাট বড়। বিচিত্র আর মহান। ওদের মা সৌন্দর্যময়ী। নতুন নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে রাখেন সারা বছর। তিনি কখনও শান্ত কখনও দুরন্ত। আছে তাঁর অগাধ ঐশ্বর্য। তিনি পরম স্নেহময়ী জননী। সংসারটা তো তিনিই সামলান। তবে একটু খামখেয়ালি স্বভাবের।
ওরা পাঁচ ভাই, এক বোন। সবার বড় যে, সে তো ভীষণ রাগী। চোখ থেকে তার আগুন ঝরে। এই বুঝি সব ভস্ম করে দেয়। কীসের যে এত রাগ, কে জানে ! বড্ড রুক্ষশুষ্ক মেজাজ। লোকজনকে মোটে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। মনটা যেন আস্ত এক মরুভূমি। সারা গায়ে ধুলোবালি মেখে নিজেকে একেবারে ধূসর করে রাখে। হঠাত্হঠাত্ধুলো উড়িয়ে দিক দিক ছুটে বেড়ায়।
অথচ দেখো, ওর বোনটা কী মিষ্টি ! হইহই করে আসে। থৈ থৈ করে নাচে। চঞ্চলতা ওর দু’পায়ের নূপুর। মনটা ভারী সরস আর অবুঝ। সবুজ রং ওর খুব প্রিয়। চার দিক সবুজে সবুজে ছয়লাপ করে দেয়। এমন প্রাণচঞ্চল মেয়েকে কাছে পেয়ে মরা মানুষও যেন প্রাণ ফিরে পায়। মনখারাপ এক নিমেষে ভাল হয়ে যায়। সমস্ত কাজে কী উত্সাহ। নিত্য নতুন সৃষ্টিতে মেতে থাকে। একটা আস্ত পাগলি যেন ! সবই ওর ভাল, তবে একটাই দোষ, বড্ড ছিঁচকাঁদুনে। কথা নেই বার্তা নেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে শুরু করে। থামতেই চায় না। কীসের যে ওর দুঃখ, কে জানে !
ছবি : সুমিত্র বসাক
ওর পরের ভাইটার সাদা মনে কাদা নেই। একেবারে ঝকঝকে চেহারা। মনে সর্বদা খুশি -খুশি ভাব। দিকে দিকে উত্সব লাগিয়ে দেয়। চার দিকে এনে দেয় ছুটির আমেজ। বাচ্চারা তো ওকে দারুণ ভালবাসে। বড়রাও বেশ পছন্দ করে। ঘুড়ি ওড়াতে ভালবাসে, বাজি ফাটাতে ভালবাসে। দারুণ হাসিখুশি আর হুল্লোড়ে।
সেজ ভাইটা কেমন যেন বুড়োটে গোছের। ধীর স্থির। কখন যে আসে, কখন যে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। ওর বড়দার যেমন ধূসর রং পছন্দ, দিদি যেমন সবুজ পছন্দ করে, মেজদা যেমন সাদা ভালবাসে, ও তেমনই হলুদ রং খুব ভালবাসে। ওর কেমন যেন পাকা -পাকা হাবভাব। তবে হ্যঁ, বড় লক্ষ্মীছেলে। কারও অন্নের অভাব সইতে পারে না। গেরস্থকে অন্ন জোগানোর চিন্তাতেই বোধ হয় ওকে এমন বুড়ো বুড়ো দেখতে হয়ে গিয়েছে।
ওর নীচের ভাইটা কেমন যেন আবছা রঙের। রহস্যে ভরা একটা ছেলে। কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকে। আবার কখনও চকচকে দাঁত বের করে হাসে। নিঃশব্দে গাছের পাতাগুলো খসিয়ে দেওয়া ওর প্রিয় খেলা। কিন্তু স্বভাবচরিত্র এত ঠান্ডা যে সবাই ওকে ভালবাসে। কাছে ডাকে। কারও বাড়িতে দু’দিন থাকলে সে ওকে আরও দু’চার দিন আটকে রাখতে চায়। বলে, থাক না, থেকে যা না আরও কিছু দিন। বেশি দিন থাকতে চায় না। সবাইকে হতাশ করে, চার দিক শূন্য করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়।
সবচেয়ে ছোটটি সবার থেকে রঙিন। ওর মধ্যে একটা ‘রাজা রাজা’ ভাব। যে গাছগুলোর পাতা ওর ওপরের দাদা ঝরিয়ে দেয়, ও ম্যাজিক করে সেগুলো আবার বানিয়ে দেয়। দক্ষ মালির মতো গাছে গাছে নানা রকমের ফুল ফোটায়। আকাশ জুড়ে ফুলের আগুন লাগিয়ে দেয়। রং ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝে না। সবার গায়ে, মনে রং ছিটিয়ে দিয়ে হাততালি দেয়। কবিকে বলে, আমাকে নিয়ে কবিতা লেখো, গান লেখো। সবচেয়ে ছোট তাই সবচেয়ে প্রাণবন্ত। ওর এমন মধুর স্বভাবকে বাড়াবাড়ি বলে মনে হয় বড়দার। বড়দা বলে, দাঁড়া, আমি আসছি, এমন ঠ্যাঙানি দেব না, যে একটা বছর আর টুঁ শব্দটি করতে পারবি না। সেই রাগী বড়দার হুঙ্কারে যেন তাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচে।
ওরা ছয় ভাইবোন যে যেমনই হোক, সবাই কিন্তু খুব কাজের। প্রত্যেকে নিজের নিজের কাজ করে যায়। আমরা ওদের সব সময়ে ঠিকঠিক চিনতেও পারি না, কিন্তু ওরা আমাদের জন্যই কাজ করে। সারাটা বছর আমাদের ঘিরে থাকে।
জানতে ইচ্ছে করছে তো ওরা কারা?
কী ওদের নাম?
ওদের বাবার নাম বিশ্ব।
ওদের মা’র নাম প্রকৃতি।
ওদের নাম তো তোমরাও জানো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্ , হেমন্ত, শীত আর বসন্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.