|
|
|
|
|
অকাল ডার্বিতে এল ক্লাসিকোর ছায়া
রতন চক্রবর্তী • কলকাতা |
|
এল ক্লাসিকো আর কলকাতা ডার্বির মধ্যে এ বার কী অদ্ভুত সমাপতন!
রাত জেগে রিয়াল মাদ্রিদ-বাসের্লোনা দেখেছে বিশ্বএক বার নয়, দু’বার নয়এই মরসুমেই তিন- তিন বার!
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বিও তো তাই! আই লিগের দু’টো উত্তেজক ম্যাচের পর, আজ রবিবার আবার বাংলা দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার ম্যাচ।
হোক না ভিন গ্রহের ফুটবলের সঙ্গে তুলনাকিন্তু কী অদ্ভুত মিল কোপা দেল রে-র সঙ্গে আইএফএ শিল্ডের! কোপায় মেসি বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মুখোমুখি হওয়ার কথাই ছিল না। কিন্তু কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই সেমিফাইনালে দেখা হয়ে গেল তাঁদের। এখানেও তো তাই। সাপ্রিসার কাছে না হারলে তো শেষ চারে দেখাই হত না ওডাফাদের সঙ্গে চিডির। একেবারে হয়তো দেখা হত ফাইনালে।
অকালে এল ক্লাসিকো দেখতে ন্যু কাম্পে এসেছিলেন পঁচানব্বই হাজার দর্শক। মাঠ ভর্তি করে। অকাল ডার্বিতে কত দর্শক আসবেন যুবভারতীতে? বিদেশের মতো কলকাতায় অনলাইন টিকিট কেনার সুযোগ নেই। চূড়ান্ত অপেশাদার আইএফএ কর্তারা সকালে দুই প্রধানের কোনও মাঠেই বিক্রির জন্য টিকিট পাঠাননি। অনুশীলন দেখতে আসা ক্লাব সমর্থকরা হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছেন। ফলে ষোলো মাস পরে চালু হওয়া ফ্লাডলাইটের নীচের গ্যালারিতে কত দর্শক আসবেন, তা রবিবার বিকেলের আগে বোঝা সম্ভব নয়। |
|
মহাযুদ্ধের মহড়া: তৈরি হচ্ছেন ওপারা-চিডি। সঙ্গী বরিসিচ। |
করিম বেঞ্চারিফা কিন্তু রবিবার তাঁর আইডল হোসে মোরিনহো হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। অকাল ক্লাসিকোতে বার্সাকে দু’পর্ব মিলিয়ে ১-৩ হারিয়ে ড্যাংড্যাং করে ফাইনালে চলে গিয়েছিল মোরিনহোর রিয়াল। মোহনবাগান কি পারবে কলকাতার ‘বার্সা’-কে হারাতে? “আমরা যে ফুটবল খেলছি, ছেলেরা যে ভাবে পরিশ্রম করছে তাতে আমি আশাবাদী। ঠিকমতো খেলতে পারলে.....” শনিবার সকালে অনুশীলনের পর বলে দিয়েছেন মরক্কান কোচ।
তাতে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। “আগের ডার্বিতে ওরা ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলেছিল। এ বার তো জেতা ছাড়া পথ নেই। ওরাও নিশ্চই জেতার জন্য খেলবে। ফলে ম্যাচটা জমবে,” ঘুরিয়ে কটাক্ষ ইস্টবেঙ্গলের সাহেব কোচের।
যা শুনে করিমের পাল্টা মিসাইল, “অনেকেই বলছেন ওরা ক্লান্ত। আমার মনে হয় ওটা কোনও ব্যাপারই নয়। এ রকম অবস্থায় আমি বহু বার পড়েছি। খেলার আগে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করিনি।”
থেমে থাকতে চাইছেন না মর্গ্যানও। “অনেকেই ওডাফার কথা বলছেন। ভিয়েতনামে আমার ডিফেন্ডাররা বিপক্ষের এমন দু’জন স্ট্রাইকারকে আটকেছে যারা অনেক অনেক ভাল। ইস্টবেঙ্গলে দেশের সেরা ডিফেন্ডাররা আছে। তাদের সবাইকে তো খেলাতেই পারছি না।”
ভদ্রতার মোড়কে দুই বিদেশি কোচের মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের আড়ালে অবশ্য পিঠ চাপড়ানি যে নেই তা নয়। যুবভারতীতে অনুশীলনের পর মর্গ্যান যেমন বলে দিয়েছেন, “মোহনবাগান যথেষ্ট শক্তিশালী দল। ওরা এখন অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ।” তেমনই করিম নিজের মাঠে অনুশীলনের পর মন্তব্য করেছেন, “ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে ওরা কতটা শক্তিশালী।”
শনিবার সকালে কিন্তু দুই শিবিরে ঢুঁ মেরে মনে হল, আরও একটা ট্যাকটিক্সের ঝনঝনানির অপেক্ষায় থাকতেই পারে রবিবাসরীয় সন্ধ্যা।
ট্রেভর মর্গ্যান এবং করিম বেঞ্চারিফা দু’জনেই অবশ্য তাঁদের আস্তিনে থাকা তাসের ব্যবহার নিয়ে ধোঁয়াশা রেখেছেন। সেটা কেমন? দু’জনেই টিম করে এ দিন ম্যাচ খেলাননি। শুধু তাই নয়, হাতে থাকা চার বিদেশিকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছেন অনুশীলনে।
চোটের জন্য রহিম নবি খেলছেন না। তবে টোলগে ওজবে ফিরছেন মাঠে। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে প্রথম একাদশে সম্ভবত রাখছেন না করিম। টিম সূত্রের খবর, করিম ভরসা রাখছেন ওডাফা-সাবিথ জুটিতে। মাঝমাঠে কুইনটন। কিন্তু মণীশ ভার্গব কি খেলবেন? খেললে কে বসবেন জুয়েল না মণীশ মৈথানি? হাসতে হাসতে করিম বললেন, “সব গুলিয়ে যাচ্ছে তো? এটাই তো চাইছি।” |
|
ওডাফাকে নিয়ে চলছে করিমের ক্লাস। টোলগের চোখ প্র্যাক্টিসে। |
মর্গ্যান আরও ধুরন্ধর। উগা-পেন-চিডির সঙ্গে বরিসিচকেও এ দিন রেখেছিলেন নিয়মিতদের দলে। চিডির পিঠে সামান্য ব্যথা। ভিয়েতনামে ম্যাচের পর থেকেই। যদি সেটা বাড়ে, তা হলে যাতে সমস্যায় না পড়তে হয়। কিন্তু চিডি খেললে তাঁর সঙ্গী কোন সিংহরবিন না বলজিৎ? লালরিন্দিকা, পেন, মেহতাবের সঙ্গে সঞ্জু না ইসফাক? প্রশ্ন করলে ব্রিটিশ মার্কা জবাব আসছে, “যাদের নাম বলছেন সবাই ১৮ জনের দলে আছে। প্রথম এগারো ঠিক করব কাল।”
কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে— তা ঠিক করতে করিমের পকেটে থাকে একটা ডায়েরি। মর্গ্যানের হাতে সাদা কাগজ। খুদে খুদে অক্ষরে নিজের বোঝার জন্য যা লিখে রাখেন তা বোঝার সাধ্য কারও নেই। সেটা ম্যাচের সময় পকেট থেকে বেরোয়।
করিমের দল সাধারণত খেলে ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে।
মর্গ্যানের ফর্মেশন আবার সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের মতো। ৪-১-২-১-২।
দুই কোচের হাতেই মজুত অস্ত্রের ভাণ্ডার। করিমের হাতে ওডাফা, চিডি, নির্মল, সাবিথের মতো ‘এ কে ৪৭’ থাকলে, মর্গ্যানের হাতে চিডি, পেন, ডিকার মতো মারণাস্ত্র রয়েছে।
কিন্তু শিল্ড ফাইনালে বুধবার প্রয়াগের মুখোমুখি হবে কে? চৈত্র শুরুর সেলে দাম কমবে কার ইলিশ না চিংড়ির? দুই কোচের গলায় একই সিডি বাজছে‘মাঝমাঠ যার, ম্যাচ তার।’ সঙ্গে সংযোজনগোলের সুযোগ যে কাজে লাগাতে পারবে সে-ই ম্যাচ জিতবে।
ওডাফা বনাম ওপারা, চিডি বনাম ইচের যুদ্ধ ঘিরে অবশ্য ফেসবুক উপচে পড়ছে মন্তব্যে। মজার মজার ছড়া থেকে খেউড়, সবই হাজির। পাড়ায় পাড়ায় উড়ছে পতাকা। দোলের আগের আবিরও তৈরি উৎসবে মাততে। বাঙাল-ঘটির অষ্টাশি বছরের চিরন্তন লড়াই যে অমলিন। তা সে যতই অকাল ডার্বি হোক।
|
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
|
|
|
|
|