পারফর্ম করতে না পারলে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল |
তবে বিদেশি কোচদের কাছ থেকে
পাওয়া যায় অনেক বেশি
|
গৌতম ভট্টাচার্য • মোহালি |
যদিও ক্রিকেট তাঁর এলাকা নয়। তবু দ্রাবিড়-কুম্বলেদের মতো বন্ধুদের থেকে তিনি অনেক খবরই রাখেন। আর বিদেশি কোচ তো এমন ইস্যু যেটা তাঁর হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। ভারতীয় দলের অধিনায়ক থাকাকালীন টানা এ ব্যাপারে নিজের সোচ্চার বক্তব্য রেখেছেন। বিদেশি প্রশিক্ষক সমর্থন করতে গিয়ে নিজে সমর্থন হারাচ্ছেন কি না মাথায় রাখেননি। সেই ভাইচুং ভুটিয়া শনিবার গ্যাংটক থেকে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন। বিষয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ ডানকান ফ্লেচারকে আরও এক বছরের জন্য স্বপদে বহাল করার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত!
ভাইচুং: একটাই খচখচ করছে। ক্রিকেট আমার বিষয় নয়। সব কিছু জানিও না।
|
প্রশ্ন: বিনয় করবেন না। আপনি সব খবর রাখেন। দ্রাবিড়দের সঙ্গে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ থাকে।
ভাইচুং: তা হলেও খুঁটিনাটি টিম কোথায় কী করছে সব জানা সম্ভব হয় না।
প্র: সোজা বলুন না, ফ্লেচারকে রাখা ঠিক হল কি না? এক জন বাইরের জগতের লোক অথচ নামী স্পোর্টসম্যান হিসেবে আপনার কী মত?
ভাইচুং: দেখুন আমি বিদেশি কোচেদের পছন্দ করি। আর সেটা নিয়ে কখনও ঢাকঢাক-গুড়গুড়ও করি না। কিন্তু একটা কথা তো মানতে হবেপারফরম্যান্স। সেটা না থাকলে বিদেশি কোচকেও সরিয়ে দেওয়া উচিত। আমার সিকিম ইউনাইটেড টিমেই তো ফিলিপ ডি’রাইডারকে আমরা পারফরম্যান্স না থাকায় সরাতে বাধ্য হয়েছি।
প্র: ভারতীয় ক্রিকেটে বিদেশি কোচ। আর ভারতীয় ফুটবলে। দুটোই কি একই রকম অপরিহার্য বলে মনে হয়?
ভাইচুং: ক্রিকেটে হয়তো আবশ্যিক নয়। ক্রিকেটে আমরা কখনও বিশ্বের এক নম্বর। কখনও দুই। বড়জোর তিনে নামলাম। সেখানে অত্যাধুনিক যে টেকনিক বা সংস্কৃতি তা হয়তো দেশের কোচেদেরও আয়ত্তে। খুব অসুবিধে হবে না।
ফুটবলে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৪৫ নম্বর দেশ। শীর্ষে ফুটবল কী হয় সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই আমাদের নেই। সেখানে দেশে যদি গুটিকয়েক ভাল কোচ থেকেও থাকেন, বিদেশি মাস্ট। যিনি প্রথম দশটা টিমে নিয়ে যাওয়ার প্রকৃত রোডম্যাপ আমাদের দেখাতে পারবেন। ফুটবলে আমরা পিছনে, ভাল বিদেশি কোচই একমাত্র আলো দেখাতে পারেন।
প্র: বব হাউটন সম্পর্কে আপনি খুব উচ্চকিত ছিলেন।
ভাইচুং: কী বলছেন! হাউটনের কেরিয়ার দেখেছেন? ইংল্যান্ডের এখনকার ম্যানেজার রয় হজসনের বিয়েতে বেস্ট ম্যান ছিলেন হাউটন। গুগল খুলে দেখুন, ইংল্যান্ড ম্যানেজার একটা সময় সুইডেনে হাউটনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। সেই লোক আমাদের ফুটবলে থাকা মানে কত বড় দিশা ছিল সেটা।
প্র: প্র্যাক্টিসের ধরনে কি অভিনবত্ব ছিল কোনও?
ভাইচুং: আমি বলব খুব ছিল না। পজিশনিং, একটা শেপ-এ দাঁড়ানো, ফর্মেশন তৈরি এগুলোই চলত বিরামহীন ভাবে।
|
|
ফ্লেচারের জমানায় |
টেস্ট ২২, জয় ৮ হার ১০ ড্র ৪
• বিদেশে শেষ টেস্ট সিরিজ জয় দু’ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
• ওয়ান ডে ৪৪ জয় ২৫ হার ১৬ ড্র ২ নো রেজাল্ট ১
|
টি টোয়েন্টিতে |
ম্যাচ ১৭ জয় ৯ হার ৮
• ভারতীয় কোচ হিসাবে মেয়াদ বেড়েছে আরও এক বছর। |
|
প্র: ভারতীয় মিডিয়া তো তখন সমালোচনা করেছিল বেশ কড়া করে যে হাউটনের ট্রেনিংয়ে বৈচিত্র নেই?
ভাইচুং: মিডিয়া! মিডিয়ার কথা কি না তুললেই ভাল নয়। আমাদের দেশের মিডিয়ার কথা শুনে ট্রেনিং করলে ১৪৫ নম্বর র্যাঙ্কটাও জুটত না।
প্র: কিন্তু আপনি নিজেও তো বলছেন অভিনবত্ব ছিল না তেমন হাউটনের অনুশীলনের ধরনে!
ভাইচুং: কথাটা তো শেষ করতে দিলেন না। আমরা যখন হাউটনকে জিজ্ঞেস করি, কেন নতুন কিছু ট্রাই করা হচ্ছে না, তখন উনি খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছিলেন যে এই শেপিং আর ফর্মেশন তৈরি রোজ করতে করতে এটাই অবচেতনে ঢুকে যাবে। তখন মাঠে গিয়ে এটাই রুটিন হয়ে যাবে। আপনা কাজ করবে।
ভারতীয় কোচেরা বিদেশে যান কোথায় শিখতে বা প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করতে! বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে আইটি পেশাদাররা যেমন আমাদের দেশে হাতেকলমে কাজ শিখতে আসে, সেটা আমাদের ফুটবল কোচেরা করলে এই জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি হত না। অনেকে তৈরি থাকত।
প্র: আপনি বরাবরই বিদেশি কোচের পক্ষে গলা ফাটিয়ে এসেছেন। আজকেও আপনার টোন শুনে মনে হচ্ছে ফ্লেচারকে যদি বা সরানো উচিত ছিল। তাঁর জায়গায় দেশি কোনও নাম আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হত না!
ভাইচুং: ক্রিকেট নিয়ে আমি বেফাঁস কিছু বলতে চাই না। কিন্তু বিদেশি কোচে অনেক সুবিধে। প্রথমত সে নিরপেক্ষ হয়। দল নির্বাচনে প্রাদেশিকতা বা রাজনীতি করে না। কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপস করে চলে না। প্র্যাক্টিসের ভাল মাঠ দাবি করে। ভাল হোটেল চায়। বলে প্লেয়ারদের ভাল ভাবে নিয়ে যেতে হবে। প্লেয়ারকে সত্যি কথাটা মুখের ওপর বলে। এমন নয় যে প্লেয়ার দেখে তাকে একটা মন রাখা কথা বলে দিল। আর পরের দিন কাগজে বেরোল অন্য কথা। এমন অনেকে আছে। |
|