|
|
|
|
সিবিআই মালখানায় ‘বন্দি’ বজরংবলী
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
|
‘জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর
জয় কপিস তেহুন লোক উজাগর....।’
চলছে হনুমান চালিসা পাঠ। সঙ্গে ঠুনঠুন বাজছে ঘন্টা। গায়ে নামাবলী চড়িয়ে আর হাতে পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে আরতি করছেন পুরুত ঠাকুর। কোনও মন্দির নয়। ছবিটি রাঁচির সিবিআই অফিসের মালখানার। আর উনি পুরুত নন, সিবিআই-এরই কর্মী।
কুড়ি বছর আগে ১৯৯৩ সালে চোরা পথে নেপালে পাচার হচ্ছিল অষ্টধাতুর তৈরি একটি হনুমান মূর্তি। মূর্তিটির ওজন ৯৮ কিলোগ্রামের কিছু বেশি। দাম কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু দেশের বাইরে পাচার হওয়ার আগেই সিবিআই অফিসাররা অবিভক্ত বিহারের আরা থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করেন। তারপর ২০০০ সালে রাজ্য ভাগ হয়ে বিহার থেকে ঝাড়খণ্ড আলাদা হয়ে গিয়েছে। আরা বিহারের একটি জেলা। রাঁচি ঝাড়খণ্ডের রাজধানী। রাজ্য ভাগ হওয়া নিয়ে জটিলতা। আর সেই জটেই আটকে পড়েছেন স্বয়ং ‘সঙ্কটমোচন বজরংবালী’। দুই রাজ্যের কোনও মন্দিরেই আর প্রবেশ করার সুযোগ হয়নি বজরংবলীর। কুড়ি বছর হয়ে গেল ‘সঙ্কটমোচন’-এর ঠিকানা রাঁচির রেডিয়াম রোডের সিবিআই অফিস। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সিবিআই অফিসাররাই ওই মূর্তির পুজো-অর্চনা করেন। |
সিবিআই মালখানার মধ্যে বন্দি বজরংবলী। ছবি: মুন্না কামদা |
আইনি জটিলতায় এ পর্যন্ত ওই মূর্তিটি আর অন্য কোনও ধর্মস্থানে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলেই সিবিআই সূত্রের খবর। মালখানার মতো একটি জায়গায় পড়ে থাকায় মূর্তিটির পুজো-অর্চনার জন্য অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে সেটি চেয়ে সিবিআই অফিসে আবেদনপত্রও জমা দিয়েছেন। কিন্তু আইনি প্যাঁচে আটকে থাকাতেই তা কারও হাতে তুলে দেওয়াও সম্ভব নয় বলেই জানান সিবিআই অফিসাররা।
রাঁচির সিবিআই-এর ডিআইজি এস কে ভগত ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি যেটুকু জানি মূর্তিটি অনেক দিন আগে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপর থেকে সেটি মালখানাতেই পড়ে আছে। ঘটা করে পুজোর কোনও ব্যাপার নয়। তবে হ্যাঁ, দেবতার মূর্তি মালখানায় পড়ে আছে। তাই কেউ সেটাকে পরিষ্কার করে দিনে দুটো ফুল দেন, দেন একটু বাতি, একটু লাড্ডু।”
সিবিআই সূত্রের খবর, আরার একটি গ্রামের মন্দির থেকে মূর্তিটি চুরি করেছিল পাচারকারীরা। আর পাচার চক্রের চাঁই ছিল রাঁচির এক যুবক। কাজ হাসিল করার জন্য ওই যুবক আরার কয়েকজনকে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে ভাড়া করেছিল। সিবিআই এর কাছে সেই খবর পৌঁছতেই মূর্তি পাচার ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআই। ওই যুবকের ওপরে নজরদারি চালানোও শুরু করে। তারপর একদিন ওই যুবকের কাছে সিবিআই-এরই কয়েকজন অফিসার ক্রেতা সেজে হাজির হন। গ্রেফতার করেন যুবককে। আরার একটি লজ থেকে মূর্তিটি আটক করে পুলিশ। সিবিআই অফিসাররা জানতে পারেন, আরা জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মূর্তিটি চুরি হয়েছিল। মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়ার কথা ছিল নেপালের একটি আর্ন্তজাতিক পাচার চক্রের কাছে। |
|
|
|
|
|