|
|
|
|
পরকীয়ার ধাক্কায় গণেশ কুপোকাত, সঙ্কটে চান্ডি
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
সিনেমায় কত কিছুই হয়। কে বি গণেশ কুমার বুঝছেন, বাস্তবেও হয়!
মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করে দিব্যি দিন কাটত গণেশের। দু’বছর আগে টিকিট দিয়ে তাঁকে কেরলের বিধানসভা ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ইউডিএফ। এ রাজ্যে যেমন বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই টিকিট দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে যা-ই হোক, জনগণেশের কৃপায় গণেশ জিতেও গিয়েছিলেন। জিতে মন্ত্রী। আর তার পর থেকেই জ্বালা বুঝছেন। এবং এখন সে জ্বালায় কেরলের ইউডিএফ সরকারই জ্বলছে!
পরকীয়ার দায়ে বেজায় সঙ্কটে পড়েছেন কেরলের বন, ক্রীড়া ও সিনেমামন্ত্রী গণেশ কুমার!
সরকারের ভিতরে-বাইরে তাঁর ইস্তফার দাবি উঠছে। স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে মামলা করার হুমকি দিয়ে এসেছেন।
|
কে বি গণেশ কুমার |
নিজের দলে সহকর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, এমন লোককে মন্ত্রিত্ব থেকে বিদায় করাই ভাল! হালচাল বুঝে গণেশ নিজেও চাইছেন মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়াই ভাল। আক্ষরিক অর্থেই গৃহবিবাদে নাজেহাল শাসক জোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডিকেই। আর মুখ্যমন্ত্রী আপাতত গণেশকে পরামর্শ দিয়েছেন, যেমন চলছে, চলুক আরও কিছু দিন। তার পরে দেখা যাবে। এইটুকু শুনে হুমায়ুন কবীরের কাহিনি মনে পড়তে পারে। কিন্তু গণেশের সঙ্কট অনেক বেশি গভীর!
কেমন সঙ্কট? সিনেমার শু্যটিং স্পটেই অভিনেতা গণেশের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এমবিবিএস পাশ যামিনী থাঙ্কাচির। সিনেমার মতোই দেখামাত্র প্রেম এবং পরিণয়। পরের গল্পও সিনেমার মতো! স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না-হওয়ায় গণেশের বাড়ি এক বার ছেড়ে গিয়েছিলেন যামিনী। পরে গণেশেরই উদ্যোগে আবার পতিগৃহে ফিরেছিলেন। এ বার দুই ছেলেকে নিয়ে কয়েক দিন আগে যে মন্ত্রীগৃহ ছেড়েছেন, বলে গিয়েছেন আর ফিরবেন না! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েও স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণারত যামিনী বলে এসেছেন, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে শেষ দেখে ছাড়বেন! কারণ? মন্ত্রীর পরকীয়া! ইউডিএফ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি তিরুঅনন্তপুরমে মন্ত্রীর বাংলোয় ঢুকে সকাল বেলা গণেশকে হেনস্থা করে এক দল লোক। গায়েও হাত তুলে দেয় ক্রুদ্ধ জনতা! হেনস্থাকারীদের সকলেই গণেশের এক প্রেমিকার আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব। কেরলের সরকারি মুখ্য সচেতক পি সি জর্জের বক্তব্য অনুযায়ী, উপসাগরে কর্মরত এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন গণেশ। তাঁকে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোনওটাই রাখেননি। সেই মহিলার আত্মীয়েরা তাই হিসাব চোকাতে এসেছিলেন! থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে মন্ত্রীর হেনস্থা-কাণ্ডে। আবার মহিলার পরিবারও প্রতারণার পাল্টা অভিযোগ করেছে গণেশের বিরুদ্ধে। এমন ‘কলঙ্কিত’ লোক মন্ত্রী থাকবেন কেন, প্রশ্ন তুলছেন জর্জ! গণেশ বলছেন, “পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করে অন্যায় করছেন জর্জ! ঘটনা একটা ঘটেছে। আমি মন্ত্রী ও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ২ এপ্রিল ইউডিএফ সমন্বয় কমিটির পরবর্তী বৈঠক পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে।” এই নাটকের মধ্যেও আরও একটা নাটক আছে! ইউডিএফের শরিক কেরল কংগ্রেস (বি)-র প্রবীণ নেতা আর বালকৃষ্ণ পিল্লাইয়ের পুত্র গণেশ। দলের একমাত্র বিধায়কও। দলে পিল্লাইয়ের কথা প্রশ্নাতীত কিন্তু বাবা-ছেলের ছাড়াছাড়ি অনেক দিনের। মন্ত্রী হয়ে গণেশ যা খুশি করছেন বলে তাঁর ইস্তফার দাবি নিয়ে বেশ কয়েক বার বাবার দ্বারস্থ হয়েছেন দলেরই নেতারা। পরকীয়া-কাণ্ডের পরে প্রবীণ পিতার কাছে যেতে হয়েছিল কেরল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রমেশ চেন্নিথালাকেও। নাটকীয় ভাবে পিতা এ বার দাঁড়িয়ে গিয়েছেন পুত্রের পাশে! ভুল করে ফেলেছে, একটু সুযোগ দেওয়া হোক ছেলেটাকে! বলেছেন তিনি। পুত্র গণেশও সুবোধ বালক হয়ে মিডিয়ার সামনে বাবার পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে লোকজনের চোখ কপালে তুলে দিয়েছেন!বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন সম্পর্কে অপমানসূচক মন্তব্যের অভিযোগ এনে দেড় বছর আগে এই মন্ত্রী গণেশেরই ইস্তফা দাবি করেছিলেন কেরল এলডিএফের উপ-দলনেতা কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ব্যাপার বলে কোডিয়ারি এখন অবশ্য ইউডিএফের কোর্টেই সিদ্ধান্তের বল ঠেলে দিচ্ছেন।
গণেশ তা বলে স্বস্তিতে নেই! দুই নারী দু’দিকে তাল ঠুকছেন। লোকে দেখছে, হাসছে। মন্ত্রী ভাবছেন শ্যাম রাখি না কুল রাখি! |
|
|
|
|
|