তামিল আবেগের চাপে শ্রীলঙ্কা নিয়ে ধন্ধে দিল্লি
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব আনা হলে তাকে সমর্থন করা না-করার প্রশ্নে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার। পরীক্ষা ঘরোয়া রাজনীতির চাপ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনওটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় সরকারের কাছে।
তামিল ভাবাবেগের চাপকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ শ্রীলঙ্কাকে চটানোর ঝুঁকি নেওয়া। তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বাড়বে। কলম্বোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে বেজিং। কূটনীতি, বাণিজ্য থেকে প্রতিরক্ষা, কোনও দিক থেকেই ভারতের কাছে তা কাঙ্ক্ষিত নয়। অথচ ইউপিএ সরকারের শরিক ডিএমকে-র নেতা এম করুণানিধি গত কালও হুমকি দিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন না জানালে তাঁরা সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। ডিএমকে-র সেই চাপের মুখে পড়েই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী আজ বলেছেন, “শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে তামিল আবেগ ও স্পর্শকাতরতা সরকার অনুধাবন করতে পারছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব সম্পর্কে কোনও অবস্থান চূড়ান্ত করার আগে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সেই আবেগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”
সংশয় নেই ডিএমকে নেতৃত্বকে সামলে চলার জন্যই কেন্দ্রের তরফে নারায়ণস্বামী ওই মন্তব্য করেছেন। টু-জি কেলেঙ্কারিতে করুণা-কন্যা কানিমোঝি ও তাঁর বন্ধু তথা প্রাক্তন মন্ত্রী এ রাজার গ্রেফতারের মতো অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়েও দলীয় লাভক্ষতির অঙ্কে ডিএমকে এত দিন কেন্দ্রের সরকারকে সমর্থন করে গিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার তামিলদের নিয়ে দেশীয় তামিলদের ভাবাবেগ জয়ললিতারও অন্যতম হাতিয়ার। সেই অস্ত্র ব্যবহারে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয় করুণানিধিদের পক্ষে। এর মধ্যে কেন্দ্রকেও ভাবতে হচ্ছে, সংসদে গরিষ্ঠতা কীসে থাকবে। তৃণমূল সরে যাওয়ার পরে বামেদের সঙ্গে সেতুবন্ধনের একটা চেষ্টা চললেও, এখনও তা স্পষ্ট কোনও সমঝোতার রূপ পায়নি। মুলায়ম-মায়াবতীদের সমর্থনও ভীষণ রকম শর্তসাপেক্ষ, অনিশ্চয়তায় ভরা এবং দর কষাকষি-নির্ভর। অথচ লোকসভা ভোটের আগে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোর রাজনৈতিক দায় রয়েছে সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহদের। ফলে সংসদের সংখ্যার অঙ্কটা স্থিতিশীল রাখার জন্যও ডিএমকে-র হুমকিকে গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে।
তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর প্রস্তাবে সমর্থন জানানোর ব্যাপারে এখনও ধন্ধে রয়েছে কেন্দ্র। বরং সাউথ ব্লকের কর্তাদের কথায়, “তামিল আবেগ নয়াদিল্লি বুঝতে পারছে ঠিকই। কিন্তু এ-ও বুঝতে পারছে দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রের ওপর চিন যেভাবে প্রভাব খাটাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তাতে শ্রীলঙ্কাকে চটানো ঠিক হবে না। সে ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরে নয়াদিল্লির প্রভাবেও আঁচ পড়তে পারে।
শ্রীলঙ্কায় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে আমেরিকা এই দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি প্রস্তাব আনতে চলেছে। ডিএমকে নেতৃত্বের দাবি, ভারত আমেরিকার আনা ওই প্রস্তাব আরও কঠোর করার জন্য তাতে সংশোধনী প্রস্তাব আনুক। সেই সঙ্গে যুদ্ধপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে আন্তর্জাতিক স্তরে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিক।
তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, করুণানিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ডিএমকে-র মন্ত্রীদের তুলে নেওয়ার কথা বললেও, তিনিও নয়াদিল্লির সমস্যা জানেন। তামিল আবেগের জন্য চেন্নাইয়ে জয়ললিতার সঙ্গে তুল্যমূল্য রাজনীতির কারণেই তাঁকে এই হুমকি দিতে হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সেই একই কারণে তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতা-নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও পরিবেশ মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থনের কথা বলছেন। এই অবস্থায় একটা মধ্যপথ খুঁজে বার চেষ্টাও চালাচ্ছে সাউথ ব্লক। যাতে রাজনৈতিক ভাবে তামিল আবেগ ও ক্ষোভকে প্রশমিত করা যায়।
কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, সে দিক থেকে করণানিধির আজকের মন্তব্যটি বরং ইতিবাচক। সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ব্যাপারে সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই ডিএমকে নেতা বলেন, “সরকার জবাব দিতে কত দিন নেয় আগে দেখা যাক।” সেই সঙ্গে ডিএমকে প্রধান অবশ্য এ-ও বলেন, আমরা একটি আঞ্চলিক দল। ফলে কেন্দ্রের ওপর আমরা চাপ সৃষ্টি করতে পারি ঠিকই। কিন্তু নয়াদিল্লি শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেবে সেটা আমাদের হাতে নেই পুরোপুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.