চার মাস আগে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল যাঁর বিরুদ্ধে, চার মাস বাদেও তাঁর বিরুদ্ধেই ফের অভিযোগ। মহেশতলায় বস্তির অগ্নিকাণ্ডের পিছনে খোদ পুর-চেয়ারম্যান দুলাল দাসের হাত থাকতে পারে বলে এ বারও সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মহেশতলা পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারম্যান দুলাল দাস অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। কলকাতার বাইরে থাকায় শনিবার ঘটনাস্থলে দেখা মেলেনি তাঁর। কিন্তু এলাকাবাসীদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলে টেলিফোনে জোর গলায় তিনিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
দুলালবাবু কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিপিএম-ও এই আগুনের পিছনে দুলালবাবু তথা ওই এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অগ্নিকাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও। পুড়ে যাওয়া বস্তির বাসিন্দাদের তরফে মহেশতলা থানায় যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাতেও স্পষ্ট লেখা চেয়ারম্যানের কথা। লেখা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান’ আগুন লাগানোর ষড়যন্ত্র করেছেন। |
গত ২০ নভেম্বরও আগুনে পুড়ে গিয়েছিল ওই বস্তির কয়েকশো ঘর। দু’টি অগ্নিকাণ্ডই ‘চক্রান্তের’ ফসল বলে অভিযোগ বস্তিবাসীদের একাংশের। তাঁদের মৌখিক অভিযোগ, বস্তিবাসীদের উৎখাত করে বহুতল গড়ার মতলবেই আগুন লাগানো হয়েছে। চেয়ারম্যান দুলালবাবুর ঘনিষ্ঠ প্রোমোটারেরাই বহুতল গড়বেন। গত নভেম্বরের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে দেওয়া পুনর্বাসনের আশ্বাসও বাস্তবায়িত হয়নি বলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
চেয়ারম্যান দুলালবাবুর দাবি, ওই জমির একাংশে ১১৮৪টি ঘর তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। জমির বাকি অংশে কেএমডিএ-র জলপ্রকল্পের কাজ হচ্ছে। জমির বাকি অংশে কেএমডিএ ‘উন্নয়নমূলক’ কাজ করবে। বস্তিবাসীদের একাংশের অভিযোগ, এই ‘উন্নয়ন’ আসলে বহুতল নির্মাণের অভিসন্ধি। দুলালবাবুর বক্তব্য, “রেললাইনের একেবারে পাশে রেলের জমিতে বেশ কিছু পরিবার থাকে। তারা ১৬ বিঘা বস্তির প্রকৃত বাসিন্দা নয়। ফলে, ওখানে পুনর্বাসন পাওয়া যাবে না বুঝতে পেরেই ওই পরিবারগুলি ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”
নামে ‘১৬ বিঘা’ হলেও ওই বস্তি গড়ে উঠেছে ১৫০ বিঘা জমির উপরে। ওই জমির মালিকানা নিয়েও ধন্দে পড়েছে প্রশাসন। পুর-চেয়ারম্যানের দাবি, ওই জমির মালিক কেএমডিএ। বস্তিবাসীরা অবশ্য তা মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় সন্তোষপুর রেল স্টেশন লাগোয়া ওই জমির একাধিক মালিক রয়েছেন। ওই জমির প্রকৃত মালিক কে, তা খুঁজে বার করতে শনিবার সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুরের (সদর) মহকুমাশাসক তনবীর আফজল।
আগুন লাগার পরে এ দিন ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “গত নভেম্বরের আগুনেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল। যাঁদের বিরুদ্ধে সেই সময়ে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল, এ বারও অভিযোগের তির তাঁদের দিকেই। পুরসভার চেয়ারম্যান ওই জমিতে কোনও উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করতে চাইলে তা করতেই পারেন। তবে প্রকল্প স্বচ্ছ হতে হবে এবং কী উন্নয়ন হবে, তা বস্তির লোকজনকে অবশ্যই জানাতে হবে। কিন্তু আগুন লাগা নিয়ে কোনও রাজনীতি চলবে না। কাউকে উচ্ছেদ করাও যাবে না।” একই কথা জানিয়ে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বারংবার কেন উঠছে, প্রশাসনের তা তদন্ত করে দেখা উচিত। |