আধাসেনা তুলতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ মোর্চা
রে-বাইরে উত্তরোত্তর চাপের মুখে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তুলল। রাজ্য এই বাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। মোর্চা তা প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “পাহাড়ে এখন অশান্তি না-থাকলেও সিআরপি-সহ আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এটা ভাল চোখে দেখতে পারছি না।”
দার্জিলিংকে স্বাভাবিক রাখতে তাঁর সরকার যে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ পদক্ষেপ করবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পাহাড়ে পৌঁছেছে ৩ কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। তাঁবু গেড়েছেন ১ কোম্পানি ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানও। ১০ মার্চ রাতে জঙ্গলমহল থেকে পাহাড়ে পৌঁছেছে ২ কোম্পানি সিআরপি। সব মিলিয়ে ৬ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী পৌঁছনোর পরে দার্জিলিং পাহাড়ের পুলিশ-প্রশাসন নানা মামলায় অভিযুক্তদের ধরতে তৎপর হয়ে উঠেছে। দিনভর জওয়ানদের সে ভাবে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু রাত নামলেই তাদের সামনে রেখে অভিযানে নামছে পুলিশ। মোর্চা বিরোধী দলগুলির উপরে হামলায় অভিযুক্ত জিএলপি (গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল) সদস্যদেরই খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর।
পাহাড়ে মোর্চার বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
এর ফলেই মোর্চার অন্দরে ‘উদ্বেগ ও ক্ষোভ’ বাড়ছে। তাই জিটিএ-এর ডেপুটি চিফ তথা জিএলপি-র প্রধান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আলেকে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নির্দেশ দিয়েছেন, সিআরপি-সহ সব আধাসামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে চিঠি লিখতে। কর্নেল আলের অভিযোগ, “আধাসামরিক বাহিনীকে নিয়ে পুলিশ আমাদের নিরীহ সদস্যদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে। বাড়ির লোকজনদের হেনস্থা করছে।” তিনি জানান, কোথায়, কবে, কার বাড়িতে বিনা কারণে সিআরপি হানা হয়েছে, সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও দার্জিলিং জেলা পুলিশের সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, “সিআরপি রুটিন টহল দিচ্ছে। কোথাও কাউকে হয়রান করছে বলে অভিযোগ শুনিনি। তা ছাড়া, ফেরার অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের তল্লাশি চালানোটা নতুন কিছু নয়। কাউকে হয়রানির অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৃহস্পতিবার কালিম্পঙের মংপং থেকে বাগডোগরা ফেরার আগে মোর্চার পরিকল্পনার কথা কানে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীরও। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সাফ বলে দিয়েছেন, জিটিএ মসৃণ ভাবে চালিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নে গতি আনার ব্যাপারে শিন্দের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ কথা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই। সব মতের মানুষ যেন মিলেমিশে থাকে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে সেটা মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এখন কোন দল, কোথায় কী অভিযোগ জানাবে সেটা তাদের ব্যাপার।”
পাহাড়ের এই ছবি রাজ্য-মোর্চা সম্পর্কের পরিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি। মাস দু’য়েক আগে এমন হলে সরাসরি ফোন করে গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকেই অভিযোগ জানাতেন। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙের ম্যালের সরকারি অনুষ্ঠানে গোর্খাল্যান্ডের স্লোগান শুনে নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। এর মধ্যে কালিম্পঙের ৩ তৃণমূল নেতাকে থানার সামনেই পিটিয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে মোর্চার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ৬ জিএলপি সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। ওই ঘটনার পর দিন কালিম্পঙের আইসিকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে পাহাড়ে বসে ফের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে কার্যত মোর্চা নেতাদের আবারও হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
তবে পাহাড়ের জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, সিপিআরএম-এর মতো মোর্চা বিরোধী দলগুলি আধাসামরিক বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা স্বস্তিতে। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, এখন তাঁরা ফের মিটিং-মিছিলের কথা ভাবছেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জনসভা, মিছিলের জন্য অনুমতি মিলবে কি না, তা জানতে চেয়ে মোর্চা-বিরোধী একাধিক দল যোগাযোগ করা করছে।
ঘটনাচক্রে এ দিন ডুয়ার্সের কুমানিতে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের পরে রোশন গিরি বলেন, “কংগ্রেস আমাদের সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করছে। সে জন্য কেন্দ্রের উপরে ভরসা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.