গার্ডেনরিচে গোলমালের জেরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে অপসারণের পরেই তিনি দু’মাসের ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, ওই সময়ের মধ্যে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কোনও আধা-সামরিক বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দেবেন।
কিন্তু দু’মাসের ছুটি ভোগ বা কেন্দ্রে যোগদান কোনওটাই হল না। ছুটি কাটছাঁট করে বৃহস্পতিবার, ছুটি নেওয়ার এক মাসের মাথায় পশ্চিমবঙ্গেরই সশস্ত্র বাহিনীর অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে পুনরায় কাজে যোগ দিলেন রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। এবং তিনি এ দিন ফের কাজে যোগ দেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের আপাতত অবসান হল বলে মনে করছেন সরকারি আমলা ও পুলিশকর্তাদের একাংশ। তবে ওই আমলা ও কর্তাদের বক্তব্য, দু’পক্ষই নিজের নিজের অবস্থানে নরম হয়ে ফের কাছাকাছি আসতে পেরেছেন।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পচনন্দা নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করতে ভবানী ভবনে পৌঁছন। ভবানী ভবনের পাঁচতলায় সশস্ত্র পুলিশের এডিজি-র কার্যালয়। ১৯৮৩ ব্যাচের আইপিএস পচনন্দা সেখানে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন ওই পদে তাঁর পূর্বসূরি, ১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস কুন্দনলাল টামটার কাছ থেকে। টামটাকে রাজ্যের কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স বা সিআইএফের এডিজি করা হয়েছে। |
ভবানী ভবনে দায়িত্বভার বুঝে নেওয়ার পরে পচনন্দা এ দিন বেলা সওয়া ২টো নাগাদ মহাকরণে যান। সেখানে তিনি প্রথমেই দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যালের সঙ্গে। তার পরে যান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের ঘরে। মহাকরণে পচনন্দা বলেন, “ছুটি থেকে চলে এসেছি। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে আমি এ দিনই কাজে যোগ দিয়েছি।”
এ রাজ্যে এডিজি পদমর্যাদার অফিসার হলেও এডিজি হিসেবে পচনন্দা এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকাভুক্ত হননি। দিল্লিতে যোগ দিতে হলে তাঁকে আইজি হিসেবে যোগ দিতে হত। সেটা তাঁর পক্ষে সম্মানের হত না। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে পচনন্দাকে রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পদে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন পচনন্দা। মঙ্গলবার পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট বোর্ডের সুপারিশ পাওয়ার পরে বুধবার রাজ্য সরকারের নতুন এক নির্দেশে পচনন্দাকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের এডিজি করা হয়। আগে যিনি রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা ছিলেন, সেই বীরেন্দ্রকেই নিরাপত্তা অধিকর্তার পদে ফেরানো হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে তৃণমূল ও কংগ্রেসের গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার দু’দিন পরেই পচনন্দাকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি ভাবে এর কারণ হিসেবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে বিলম্বকে দায়ী করা হলেও পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলের অনেকেরই মত, এক জন পুলিশ অফিসার খুনের পরে রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে পচনন্দার নিরপেক্ষ প্রশাসক ও বাহিনীর যথার্থ নেতা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টাকে ভাল চোখে দেখেননি শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। |