রাজ্যের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকার মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না-দেওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি হতাশ। এই ধরনের পরিবেশে কাজ করতে আমি অভ্যস্ত নই।” এই মামলা নিয়ে আর অপেক্ষা না-করে সোমবার রায় দিয়ে দেবেন বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
আদালতে রাজ্য সরকারের বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। হুগলির ধনেখালি থানায় মৃত্যুর ঘটনা সংক্রান্ত অন্য একটি মামলাতেও রাজ্য সরকার সময়মতো রিপোর্ট পেশ করতে না-পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি। এ ক্ষেত্রে রিপোর্ট পেশের জন্য তিনি শেষ বারের
মতো আরও সাত দিন সময় দিয়েছেন রাজ্যকে।
|
অরুণ মিশ্র |
গত বছরের শেষাশেষি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েই বিচারপতি মিশ্র জানিয়ে দিয়েছিলেন, কর্মসংস্কৃতির প্রশ্নে তিনি আপোস করতে চান না। এ নিয়ে আইনজীবী মহলের সঙ্গে সংঘাতও বাধে তাঁর। সম্প্রতি বন্ধ সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্যের মানুষের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি মিশ্র বলেন, মানসিকতার বদল না-হলে জোর করে বন্ধ-সংস্কৃতির অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের মানসিকতার যে পরিবর্তন হয়নি, বৃহস্পতিবারের দু’টি মামলায় তা স্পষ্ট হল বলে মনে করা হচ্ছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে সেন্ট্রাল স্টেশন তৈরির জন্য রাজ্য সরকার যে জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তা আইনসঙ্গত নয় বলে রায় দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। রাজ্য সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু এর পরেই কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসে তৃণমূল। রেল দফতর যায় কংগ্রেসের হাতে। রেল সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার তখন থেকেই এই প্রকল্প সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে জমিজটের জেরে মেট্রো প্রকল্প শেষ হবে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। রাজ্য সরকার তখন ডিভিশন বেঞ্চে ফের আবেদন জানায়। হাইকোর্ট জানতে চায় এই মামলা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের অবস্থান ঠিক কী। রাজ্যের বক্তব্য জানানোর জন্য তিন দিন সময় চান সরকারি আইনজীবী।
এ দিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। তখনই জানা যায়, রাজ্য সরকার এখনও এই আপিল মামলার প্রতিলিপি মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে দেয়নি। এ কথা জানার পরেই প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর ধারণা হয়, সরকার বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন। তা না-হলে এই প্রকল্প যাদের, এত দিন পরেও তাদের আবেদনের প্রতিলিপি পাঠানো হল না কেন?
ধনেখালি থানার লক আপে নাসিরুদ্দিন মোল্লার মৃত্যুর ঘটনাতেও এ দিন রাজ্য সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট। নাসিরুদ্দিনকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল, কেনই বা তাঁর মৃত্যু হল তার প্রামাণ্য ব্যাখ্যা চেয়েছিল হাইকোর্ট। এ জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। হাইকোর্ট বলেছিল, সিআইডির তদন্তে তারা সন্তুষ্ট নয়। সিআইডি নিরপেক্ষ তদন্ত করতে না-পারলে অন্য সংস্থাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হবে। এ দিন ওই মামলার শুনানির সময় রাজ্য সরকার হাইকোর্টের চাওয়া ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। রাজ্যের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, আরও সাত দিন সময় প্রয়োজন। সেই আবেদন মঞ্জুর করলেও প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, এ ব্যাপারে আর সময় দেওয়া যাবে না। |