অসীমকে গুরুত্ব না দিয়ে জবাব এড়ালেন অমিত
লেছিলেন, যা বলার বিধানসভায় বলবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেট নিয়ে তাঁর জবাবি ভাষণে অসীম দাশগুপ্তের তোলা অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন অমিত মিত্র। মাত্র বাইশ মাস আগেও যিনি ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী, তাঁকে নস্যাৎ করে বিধানসভার
বাইরে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, “ওঁকে কেন এত গুরুত্ব দিতে যাব? কী প্রয়োজন আছে!”
গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন মনে করেননি, তাই রাজ্যের বৃদ্ধির হার, কর্মসংস্থান, ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে অসীমবাবুর তোলা প্রশ্নের জবাব দেননি অমিতবাবু। কিন্তু ঘটনা হল, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই সব প্রশ্ন তুলেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রও। কার্যক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতাকেও গুরুত্ব দিলেন না অর্থমন্ত্রী।
অমিতবাবুর কাছে আপাতত যাঁর গুরুত্ব সব চেয়ে বেশি, তিনি হলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস। তিরিশের দশকের মহামন্দা থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দিয়েছিল যাঁর তত্ত্ব। যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) বৃদ্ধির যুক্তি দিয়ে এ বারের বাজেট বক্তৃতায় অমিতবাবু বলেছেন, “এর ফলে যে উদ্বৃত্ত রাজস্ব আদায় হবে, তা দিয়ে আমরা সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি করতে পারব। কেইনসিয়ান মাল্টিপ্লায়ারের তত্ত্ব অনুযায়ী, এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য যথেষ্ট উন্নত হবে। সাধারণ মানুষও উন্নত পরিকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবার সুযোগ পাবেন।” অসীমবাবুর অভিযোগ ছিল, এক দিকে নতুন করে চালু করা প্রবেশ কর, অন্য দিকে ভ্যাটের হার বৃদ্ধি এই জোড়া জাঁতাকলে পড়ে সব জিনিসের দাম বাড়বে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়বে শিল্পও।
এই অভিযোগের কোনও জবাব অমিতবাবু দেননি।
প্রবেশ কর নিয়ে অসীমবাবুর একটি প্রশ্নের জবাব অবশ্য অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন। অসীমবাবু জানতে চেয়েছিলেন, এই কর চালু করার জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে অমিতবাবুর দাবি, এই কর বসানোর জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দরকার নেই। যার পাল্টা সূর্যবাবুর মন্তব্য, “এই কর নিয়ে যে যুক্তিই অমিতবাবু দিন না কেন, এর ফলে জিনিসের দাম বাড়বেই। তা ছাড়া, কী ভাবে, কত প্রবেশ কর নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে আজও কোনও বিধি বিধানসভায় পেশ করা হয়নি।”
বাজেটে অমিতবাবু দাবি করেছিলেন চলতি অর্থবর্ষে (২০১২-’১৩) রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার গিয়ে দাঁড়াবে ৭.৬ শতাংশে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি। কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে উৎপাদন বৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তার ব্যাখ্যা বাজেটে নেই বলেই দাবি করেছিলেন অসীমবাবু। অমিতবাবু জবাব দেননি। ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান কোথায়, কী ভাবে হল, সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে বাম আমলের শেষ তিন বছরে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জগুলি থেকে খুব কম লোকই চাকরি পেয়েছেন।
বামেদের মতো কংগ্রেসকেও এ দিন বিঁধেছেন অমিতবাবু। ইউরো সঙ্কট কাটাতে ইউপিএ সরকারের ৫০ হাজার কোটি টাকা সাহায্যকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “কোন সমস্যাটা কেন্দ্রের কাছে আগে? পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক সমস্যা না কি ইউরোজোনের। নিজের বাড়িতে আগুন লেগেছে, আর দমকল নিয়ে অন্যের বাড়ি গিয়ে হাজির কি হওয়া যায়?” অর্থমন্ত্রীর দাবি, দ্বাদশ অর্থ কমিশন পরিষ্কার জানিয়েছিল ঋণভারে জর্জরিত কোনও রাজ্যকে ‘মরেটোরিয়াম’ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ঋণ মকুব করার কথাও ভাবা যায়। আর ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও কেরল ঋণভারে জর্জরিত।
যা শুনে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “দ্বাদশ অর্থ কমিশনের কথা উনি কেন বলছেন? ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন যে বলেছে রাজ্যের নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে, সেটা কেন বলছেন না?”
পড়ে পাওয়া কড়ির জোরে এ যাত্রা রাজ্যের আয় অবশ্য বাড়িয়েছেন অমিতবাবু। কিন্তু খরচও বাড়িয়েছেন বিস্তর। মন্দা থেকে মুক্তি পেতে সরকারি খরচ বাড়ানোর কথা কেইনসও বলেছিলেন। তবে দান-খয়রাতিতে অবশ্যই নয়!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.