কাজের জন্য ইনাম কেন, প্রশ্ন পরিষেবা বিলে
মানুষের জন্য পরিষেবা দেওয়া নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মীদের জরিমানার পাশাপাশি ইনামের ব্যবস্থাও চালু করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বার্থ সার্টিফিকেট, ডেথ সার্টিফিকেট, জাতির শংসাপত্র-সহ বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার জন্য এ বার থেকে সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে আইন করে। বৈধ কারণ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে পরিষেবা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ২৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। পরিষেবা পাওয়ায় কোনও ত্রুটি নিয়ে দাবি নিষ্পত্তির জন্য গড়া হবে কমিশনও। প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মীরা পরিষেবা না দিলে তাঁদের জরিমানার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারই চালু করছে। সেখান থেকেই তিরস্কারের ধারণা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকেও।
এর পাশাপাশি পরিষেবা দানের সঙ্গে যুক্ত যে কর্মীর বিরুদ্ধে গোটা বছরে অভিযোগ উঠবে না, তাঁর জন্য সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যন্ত ইনামের (ইনসেনটিভ) ব্যবস্থাও রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে পুরস্কৃত কর্মীর সার্ভিস রেকর্ডে যোগ হবে শংসাপত্রও। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে সাধন পাণ্ডের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর যে লোক পরিষেবা অধিকার বিল (দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইট টু পাবলিক সার্ভিসেস বিল, ২০১৩) আনছে, সেখানে এমন দাওয়াইয়ের কথাই বলা হয়েছে।
ওই বিল থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কাজ করলে পুরস্কার, না করলে তিরস্কার এই নীতি নিতে চাইছে মমতার সরকার। কিন্তু পরিষেবা দিতে পারলে কর্মচারীদের বাড়তি পুরস্কারের ব্যবস্থা নিয়েই কিছুটা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এক বাম বিধায়কের কথায়, “এ তো বখশিস! যে পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা সরকারি কর্মীদের কাজের মধ্যেই পড়ে। ওই কাজের জন্যই তাঁরা বেতন পান। কাজে ফাঁকি দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কিন্তু যে কাজ করার জন্যই তাঁর নিয়োগ, তার জন্য আবার বখশিস দেওয়াকে আইনি করা হচ্ছে কেন?”
পক্ষান্তরে, তৃণমূলের এক বিধায়কের বক্তব্য, “এ রাজ্যে অতীতে ডু ইট নাউ-সহ নানা স্লোগান দিয়েও সরকারি কর্মচারীদের সকলকে ঠিক সময়ে কাজ করতে বাধ্য করানো যায়নি। পরিষেবা দেওয়া নিশ্চিত করার জন্য এই পুরস্কার এবং তিরস্কারের ব্যবস্থা। সবাই যদি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতেন, তা হলে তো সরকারকে এত ভাবতেই হত না!”
পরিষেবা প্রদানের জন্য সরকারি কর্মীদের দায়বদ্ধ করে তোলার এই গোটা প্রক্রিয়া কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে, অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, এই ব্যবস্থাকে সরকারের অন্দরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে কি না বিলটি নিয়ে এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কাজ আদায়ের জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ এই বিলটি। বিলেও বলা হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজ্যের মানুষের পরিষেবা পাওয়া নিশ্চিত করার বিষয়টি বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্য সরকারের বিবেচনায় ছিল। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই মানুষের হাতে ঠিক সময়ে পরিষেবা তুলে দিতে লোক পরিষেবা অধিকার আইন চালু করতে চাইছে রাজ্য’।
বিলে যে সমস্ত সংস্থান রাখা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনও সরকারি সংস্থা, সরকার অনুমোদিত সংস্থা বা সরকারি অর্থ কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত এমন সংস্থায় গিয়ে কোনও পরিষেবার জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মী বা অফিসার একটি নম্বর দিয়ে সেই আবেদন জমার রসিদ দেবেন। কত দিনের মধ্যে পরিষেবা দেওয়া যাবে, সেটাও তখনই বলা হবে আবেদনকারীকে। বিলে বলা হয়েছে, স্থানীয় থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত যে কোনও পর্যায়ে আবেদনপত্র জমা পড়ার পরে ওয়েবসাইটে তা আপলোড করতে হবে। যাতে আবেদনকারী অনলাইনে তাঁর আবেদনের অগ্রগতিতে নজর রাখতে পারেন। অনেকেই বলছেন, পুরসভা, পঞ্চায়েত বা বিডিও অফিসের মতো স্থানীয় স্তরের সব সরকারি অফিসে অনলাইন ব্যবস্থা এখনও চালু নেই। উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠার আগে মানুষকে দেওয়া আশ্বাস কতটা পূরণ করা যাবে, তা নিয়েই দেখা দিচ্ছে সংশয়। যে কর্মী বা অফিসার আবেদন জমা নেবেন, তিনি পরিষেবা দিতে না পারলে এক জন অ্যাপিলেট অফিসারের কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছেও সমস্যা হলে পরিষেবা-প্রার্থী যেতে পারবেন রিভিউয়িং অফিসারের কাছে। এই সংক্রান্ত দাবিদাওয়া নিষ্পত্তির জন্য কলকাতায় সদর দফতর করে গড়া হবে পশ্চিমবঙ্গ লোক পরিষেবা অধিকার কমিশন। কমিশন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সচিব পর্যায়ের এক জন অফিসারকে ওই কাজ দেখার দায়িত্ব দিতে পারে। কোনও কর্মীকে জরিমানা করার আগে প্রতিটি পর্যায়ে অবশ্য তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.