তাঁর বরাবরের তীব্র আক্ষেপ, এত কিছু অর্জন করেও অন্য খেলার লোকেরা প্রচার পায় না। সব মনোযোগ কেড়ে নিয়ে যায় ক্রিকেটাররা।
তা, বিষ্যুদবার মোহালি ক্রিকেটমহলের না-খেলা হওয়া দিনে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। ক্রিকেটার না হয়েও। তবে বিষয়টা জানলে বিজেন্দ্র সিংহ হয়তো খুব আহ্লাদিত হতেন না। সাবজেক্ট তিনি নিজে। সত্যি নিয়মিত মাদক সেবন করতেন কি না?
যেহেতু বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সব প্রসঙ্গ সব নামধাম সব উদ্ধৃতি খোলাখুলি লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রেসবক্স থেকে ভিভিআইপি লাউঞ্জ, স্থানীয় ক্রিকেটমহলসর্বত্র অলিম্পিক পদকজয়ী বক্সারকে নিয়ে তীব্র ফিসফাস। জনগুঞ্জন এই যে মোহালির কাছের থানায় দ্বিতীয় প্রস্থের জেরা আর মাদক সংক্রান্ত মূত্র পরীক্ষার জন্য তাঁকে পঞ্জাব পুলিশ খুঁজছে। আর তিনি হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি এই তল্লাটে কিছুতেই আসতে রাজি হচ্ছেন না। বিজেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ মহলের ধারণা, এই তল্লাটে এলেই তিনি গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন। সেই ভয়েই এ দিকটা মাড়াচ্ছেন না।
মাদক সংক্রান্ত ধরপাকড়ে পঞ্জাব পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যা প্রমাণটমাণ পেয়েছে তাতে মনে হতে পারে, মোহালির বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির মতোই বেজিং অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী বক্সারের ভাগ্যাকাশেও ঘন কালো মেঘ জমছে। জাতীয় দলের শিবির ছেড়ে বিজেন্দ্র চলে গিয়েছেন, ‘‘অফিসের কাজ রয়েছে” বলে। এ দিকে হরিয়ানা পুলিশে বিজেন্দ্রর ঊর্ধ্বতন অফিসারকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, “সে কী, কীসের কাজ? আমি তো জানি না।”
পঞ্জাব পুলিশের ধারণা, বিজেন্দ্র মূত্রের স্যাম্পল ইচ্ছাকৃত ভাবে দিতে চাইছেন না বলে এড়িয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সন্দেহ, কালক্ষেপণের উদ্দেশ্য মোটামুটি পাঁচ সপ্তাহ পার করে দেওয়া। শেষ বার মাদক সেবনের পাঁচ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর শরীরে হেরোইনের অবস্থানের হদিশ পাওয়া যায় না। সেটা সম্পূর্ণ মিশে যায়।
প্রেক্ষাপট হলমোহালি ক্রিকেট মাঠ থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে একটা বাংলো বাড়িতে তল্লাশি করে সম্প্রতি পঞ্জাব পুলিশ ১৩০ কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার করেছে। যে ভাবে সিলিংয়ের মধ্যে থাক-থাক করে দামি হেরোইন রাখা ছিল, দেখে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে যান। গোটা বাড়িটাই হেরোইনে ঠাসা। সেখানে নাকি মধুচক্রও বসত। আসতেন নানান মহিলা আর নামকরা কিছু মডেল। তদন্তে নেমে তাঁরা বক্সার রাম সিংহকে অ্যারেস্ট করেছেন। যিনি বিজেন্দ্রর খুব ঘনিষ্ঠ।
প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলেছেন, এই বাড়ি থেকে তাঁরা বিজেন্দ্রকেও একাধিক বার ঢুকতে, বার হতে দেখেছেন। যা তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। অনুপ সিংহ নামের ড্রাগ ব্যবসায়ী ধৃত এই লোকটির সঙ্গে তাঁর ছবি পুলিশের হেফাজতে। সেটাও বিজেন্দ্র অস্বীকার করেছেন এই বলে যে, “কত লোকের সঙ্গেই তো আমাদের ছবি থাকে। সবার কি পরিচয় জানা সম্ভব নাকি?”
সমস্যা হল তাঁর কললিস্ট থেকে ধৃত লোকটিকে ১৪৫ বার ফোন করার রেকর্ড রয়েছে। এটাও বিজেন্দ্র উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন এই বলে যে, “আমার সেলটা হয়তো কোথাও পড়ে ছিল। সেটা নিয়ে আমার ফ্যানেরা ফোন করেছে।” যা কারও কাছেই এতটুকুও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ক্রিকেট সার্কিটে অনেকের মনে পড়ছে, ম্যাচ ফিক্সিং তদন্তের সময় সিবিআই আর অজয় জাডেজার কথোপকথন। বুকি মুকেশ গুপ্তকে এত বার ফোন করেছিলেন কেন, তদন্তকারী অফিসার জানতে চাওয়ায় জাডেজা নাকি বলেছিলেন, “এক বার হ্যালো বলেছি। এক বার গুড মর্নিং। এক বার গুড নাইট।” অফিসার বলেন, “আর? আর বাকি একশো বার কী বললেন?”
জাডেজা স্তব্ধ হয়ে যান। বিজেন্দ্রেরও জেরার মুখে পড়লে বলার কিছু নেই। এ দিনও মোহালি প্রেসবক্স থেকে চণ্ডীগড়ের পরিচিত কোনও কোনও সাংবাদিক তাঁকে কথা বলার জন্য খুঁজছিলেন। এঁদের একটা সময় তিনি বারবার বলেছেন, “আমাদের নিয়ে লেখো। আমরা ক্রিকেট খেলি না বলে কি কোনও উৎসাহ পাও না?” আজ এরা উৎসাহ দেখাচ্ছে। তিনি নীরব।
পঞ্জাব পুলিশ সূত্রের ঘোর সন্দেহ, ড্রাগ সিন্ডিকেটের সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের একটা বড় চক্র জড়িয়ে রয়েছে, বিজেন্দ্রতেই ঘটনার শুরু এবং শেষ নয়।
চণ্ডীগড়ে বক্সারের বন্ধুবান্ধবেরা অবশ্য আতঙ্কিত যে, হরিয়ানা পুলিশের চাকরি এবং নাম শেষ পর্যন্ত আইনের লম্বা হাত থেকে তাঁকে বাঁচাতে পারবে কি না? রাজীব খেলরত্ন, অর্জুন এবং পদ্মশ্রীজাতীয় সব পুরস্কার এবং খেতাব দুইয়েই ভূষিত সাতাশ বছরের বক্সার। এ বার দেখার, লান্স আর্মস্ট্রংয়ের নিয়তি তাঁর জন্যও অপেক্ষা করে রয়েছে কি না? |