মাঠের বাইরের হোমওয়ার্কেই
মালাগার স্বপ্নের দৌড়

বার্সা, রিয়াল কিংবা ম্যান ইউ যে শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নাটকীয় রাত ফুটবলপ্রেমীদের উপহার দেয় না। অন্য ক্লাবেরও যে সেই ক্ষমতা আছে, বুধবার রাতে বুঝিয়ে দিল দু’টো টিম। এক দিকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের এক ঐতিহ্যশালী ক্লাব। অন্য দিকে এক নতুন শক্তি।
বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচ জিতেও অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে আর্সেনালের নাটকীয় বিদায়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কোনও ক্লাবের না থাকাটা যেমন ব্রিটিশ ফুটবল সমাজের কাছে রেড অ্যালার্ট। তেমন একই দিনে মালাগা-র উত্থান এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলে স্পেনের শাসনকে আরও বেশি কায়েম করল।
আনন্দে উদ্বেল মালাগার ফুটবলাররা।
আর্সেন ওয়েঙ্গার আট বছর আর্সেনালকে ট্রফি দিতে পারেননি। তবু এখনও সসম্মানে দায়িত্বে। আমাদের এখানে যা ভাবাই যায় না। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে এমন হলে আট বছরে কমপক্ষে ষোলো জন কোচ বদল হত। ইউরোপের শক্তিশালী ক্লাবের সমর্থক সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু তারা গেল গেল রব তোলে না এখানকার মতো। তার ফলও পায়। আর্সেনালকেই দেখুন। পরপর দু’বার দুর্ভাগ্যক্রমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গেল। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের মনে চিরকালীন দাগ রেখে।
গত মরসুমে এসি মিলানের কাছে প্রথম লেগে ০-৪ হারের পর ফিরতি ম্যাচে ইতালীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৩-০। এ বার অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের আরও কাছাকাছি এসে পারল না। নিজের মাঠে প্রথম লেগে বায়ার্নের কাছে ১-৩ হারার পর বুধবার রাতে অ্যাওয়ে ম্যাচে বিখ্যাত জার্মান ক্লাবকে ২-০ হারাল শুরুর তিন মিনিটে জিরৌ এবং শেষের চার মিনিট আগে কোসেয়ানির গোলে। সব মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-৩। মুলার, রবেন, সোয়াইনস্টাইগার, লামের বায়ার্ন অ্যাওয়ে ম্যাচে বেশি গোল করার সুবাদে কোনও রকমে পরের রাউন্ডের মুখ দেখছে। ম্যাচটায় পোডোলস্কি, উইলশেয়ারের মতো প্লেয়ারদের না খেলানোর জন্য ওয়েঙ্গার এখন নিজের মাথার চুল ছিঁড়লে অবাক হব না। পাশাপাশি এ-ও বলব, গোল পার্থক্যে হারলেও আর্সেনালের প্রত্যাবর্তন বার্সেলোনার চেয়ে আদৌ কিছু কম নয়।
মালাগা-র সাফল্যে দশ বছরের মধ্যে এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে স্পেনের তিনটে ক্লাব। ভ্যালেন্সিয়া, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, সেভিয়া-র মতো লা লিগা-র ধারাবাহিকতা দেখানো দলগুলোও যে শৌর্য দেখাতে পারেনি। মালাগা প্রভিন্সের ফুটবল ক্লাবটাকে কাতারের রাজপরিবারের শিল্পপতি শেখ আবদুল্লা আল-থানি ২০১০-এর জুনে কেনার আড়াই বছরের মধ্যে টিমটার এমন স্বপ্নের উত্থান। গত বছর স্প্যানিশ লিগে চার নম্বরে উঠে আসায় (চলতি লা লিগাতেও এই মুহূর্তে বার্সা-রিয়াল-অ্যাটলেটিকো-র পর মালাগা চারে) এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলছে। এবং প্রথম সুযোগেই কোয়ার্টার ফাইনালে। শুক্রবার উয়েফা-র লটারিতে ভাল ড্র পেয়ে গেলে সেমিফাইনালও চলে যেতে পারে।
হতোদ্যম আর্সেনাল ‘সৈনিক।
সেটা হলেও আমার মতে মালাগার ক্ষেত্রে ফ্লুক হবে না। ইউরোপের সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টে আবির্ভাবেই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে টিমটা। ওদের চিলিয়ান কোচ ম্যানুয়েল পেলিগ্রিনি-র রিয়াল মাদ্রিদকে কোচিং করার অভিজ্ঞতা আছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মালাগা এখনও কার্যত অপরাজিত। গ্রুপ ‘সি’-তে এক নম্বর হয়েছিল এসি মিলানকে পর্যন্ত হারিয়ে। তার পর প্রি-কোয়ার্টারে প্রথম লেগে পিছিয়ে থেকেও প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন পোর্তাকে দু’পর্ব মিলিয়ে ২-১ হারাল। বুধবার রাতে নিজের মাঠে দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় গোটাটাই পোর্তোকে দশ জনে (দেফু লাল কার্ড দেখায়) পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু ইস্কো-র প্রথম গোল তার আগেই। সান্তা ক্রুজ ২-০ করার আগে-পরেও মালাগার আধিপত্য ছিল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি থেকে লোনে নেওয়া সান্তা ক্রুজ, আর্জেন্তিনীয় তারকা জেভিয়ার স্যাভিওলা, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জুলিও ব্যাপতিস্তা-র পাশে স্পেনের অন্যতম উঠতি প্রতিভা ইস্কোমিলেটিলে মালাগা টিমের ওজন, তীক্ষ্মতা দুইই বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। কুড়ি বছরের ইস্কো গত মাসেই জাতীয় দলের জার্সিতে স্পেনের প্রথম এগারোয় সুযোগ পেয়েছে।
গ্যালারিতে মশাল।
মাঠের বাইরে ওজনদার মালিক আর মাঠে যথাযথ টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ পেলে একটা ক্লাব কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে যেতে পারে চেলসি আগেই দেখিয়েছে। এ বার মালাগা দেখাল। আমাদের দেশে এমন কোনও ফুটবল ক্লাবের সন্ধান যে কবে পাব!

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আট
রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, মালাগা, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, বায়ার্ন মিউনিখ,
জুভেন্তাস, প্যারিস সাঁ জাঁ , গালাতাসারে




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.