বাস থেকে চুপিসারে নিত্যযাত্রীর ব্যাগ হাত সাফাই। তারপর ব্যাগের মধ্যের দরকারি জিনিস ফিরিয়ে দিতে মোবাইল ফোন। দাবি নূন্যতম ১০ হাজার টাকা। জিনিসের গুরুত্ব বেশি হলে রেটও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে।
এ ভাবেই টাকা দিয়ে মাধ্যমিকের মার্কশিট থেকে বাড়ির দলিল চুপিসারে ফেরত পেয়েছেন অনেকেই। এই চক্রের দাপটে গত কয়েক মাসে নাজেহাল হতে হচ্ছিল তারকেশ্বর ও আরামবাগ বাসলস্ট্যান্ডের নিত্যযাত্রীদের। বৃহস্পতিবার ফাঁদ পেতে ভুক্তভোগীরাই ধরে ফেললেন ওই চক্রের এক পান্ডাকে। তারপর তুলে দেওয়া হল পুলিশের হাতে।
হুগলির মধ্যে তারকেশ্বর এবং আরামবাগ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই বাসস্ট্যান্ড। এই দুই বাসস্ট্যান্ড থেকেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে শুরু করে দিঘা সর্বত্র বাস যাতাযাত করে। আর এই দুটি স্ট্যান্ডকেই টার্গেট করেছে দুষ্ট চক্র। প্রচণ্ড ভিড়ে বাসে বসার জায়গা দূরে থাক বেশিরভাগ সময়ই ব্যাগ হাতে দাঁড়ানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই বাসের হ্যান্ডেল ধরতে অগত্যা যাত্রীরা বাসের র্যাকে তাঁদের ব্যাগ রেখে দেন। দুষ্কৃতীরা তক্কে তক্কে থেকে মূলত ছাত্রছাত্রী এবং একটু সম্পন্ন যাত্রীদেরই নিশানা করছিল।
ব্যাগ হারিয়ে দিশেহারা হচ্ছিলেন যাত্রীরা। কারণ তার মধ্যে রয়েছে মাকশিট, ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র অথবা আদালত থেকে কাজ সেরে ফিরছিলেন বাড়ির দলিল সমেত কোনও যাত্রী। ব্যাগটি হাতিয়ে নিয়েই ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোবাইলে ফোন। ব্যাগের মধ্যে রাখা কোনও সূত্র ধরেই সেই নম্বর জোগাড় করছিল দুষ্কৃতীরা। তারকেশ্বর এবং আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে পুরসভার যে অফিস রয়েছে, বহু অভিযোগ সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই পড়ছিল।
সম্প্রতি এক ছাত্রের মার্কশিট হারিয়ে যায়। দিশেহারা ওই ছাত্রটি ফোন পায়, টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তার মার্কশিটটি। তিনি বিষয়টি তারকেশ্বর বাসস্ট্যান্ডের ওই অফিসে জানান। অফিসের কর্মীরাই এরপরে ফাঁদ পাতেন। বৃহস্পতিবার ছাত্রটি যে জায়গায় টাকা নিয়ে হাজির হন, সেখানে ছিলেন কয়েক জন ভুক্তভোগী। তাঁরাই ফাঁদ পেতে কৌশিক হালদার নামে ওই চক্রের পান্ডাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। হাওড়ার দাশনগরের হালদার পাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই চালাচ্ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। শ্রীকান্ত গোস্বামী এবং কাশীনাথ ঘোষ এ দিন বুদ্ধি করে ওই পান্ডাকে ধরেছেন। তাঁরা বলেন, “আমরাও প্রতারিত হয়েছি। এই ভাবে মানুষকে বিপদে ফেলে হাজার হাজার টাকা তুলছিল ওই চক্রটি। আমরা সর্তক থেকে হাতেনাতে ওকে ধরলাম।” পুলিশ জানান, ধৃত ওই যুবক জেরায় সব স্বীকার করেছে। |