|
|
|
|
মাকে নমিনি করতে চেয়ে মঙ্গলবারও ফোন করে সুভাষ |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
চাকুরিরত অবস্থায় কোনও কারণে তাঁর মৃত্যু হলে তার প্রাপ্য যাবতীয় অর্থ যেন তার মা পান। তাই মাকে সার্ভিস রেকর্ডে নমিনি করতে চেয়েছিল তেত্রিশ বছরের ছেলেটি। মঙ্গলবার রাতে নিজের ইচ্ছের কথা সুদূর শ্রীনগর থেকে টেলিফোনে মা-বাবাকে সে জানিয়েওছিল। ছেলের কথা শুনে রেগে গিয়ে তাকে ধমকও দেন তার বাবা, এখনই ওসব ভাবতে হবে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে সত্যিই সত্যিই ছেলে চলে গেল। একমাত্র রোজগেরে ছেলের মৃত্যু এখন হাজারিবাগের গরিব বারলা পরিবারকে সেই অর্থ সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
সুভাষ বারলা।
ছবি: নিজস্ব চিত্র |
বুধবার শ্রীনগরের বেমিনার পুলিশ পাবলিক স্কুলের মাঠে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন হাজারিবাগের জুরহুরুর বাসিন্দা সুভাষ বারলা। পরিবারের একমাত্র ছেলে সুভাষ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যও। আর তাই তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া ইস্তক বারলা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মধ্যেও বারবার ঘুরে ফিরে আসছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বিষয়টিও। তার নীচে কখনও কখনও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বাড়ির একমাত্র ছেলের দেশের জন্য শহীদ হওয়ার ‘অহংকার’ও।
বাবা পাতরাস বারলা কর্মহীন। মা পুনম নিতান্ত গরিব এক আদিবাসী পরিবারের গৃহবধূ। সুভাষের বোন মণিদীপা আমদাবাদে লেখাপড়া করে। পুত্রশোকে ভেঙে পড়া পুনমের কথায়, “ছেলে বারবার করে বলত আমাকে নমিনি করার কথা। ছেলে বলত সৈন্যদের যখন-তখন কিছু হতে পারে। মঙ্গলবার রাতেও যখন টেলিফোন করেছিল তখনও একই কথাই বলেছে। ছেলে মারা যাওয়ার পরে তার টাকায় খাওয়ার কথা কি কোনও বাবা-মা চিন্তা করে। কে জানত এমন দিন দেখতে হবে। আমাদের দেখার আর কেউ রইল না।”
জুরহুরুর বাবা পথের পণ্ডিতজি রোডে বারলাদের বাড়িতে বুধবার বিকেলের পর থেকে লোকজনের ভিড়। সান্তনা দিতে এসে সকলেই পাতরাস আর পুনমকে বোঝাতে চাইছেন, তাঁদের ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সুভাষকে নিয়ে অহংকার করছেন সকলেই। তবে সকলে একটা কথাই বারবার বলছেন, এরপরে কী করে চলবে বারলাদের।
জানুয়ারি মাসেই চাকরি থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন সুভাষ। তখনই সুভাষের সঙ্গে শেষবার দেখা হয় কলেজের দুই পুরনো বন্ধু ধনঞ্জয় ও লরেন্সের। বুধবার টেলিভিশনে সুভাষের মৃতুর খবর পাওয়ার পর থেকে দুই বন্ধুই শোকস্তব্ধ। বন্ধুর মৃতদেহ কখন আসবে তার খোঁজ খবর নিতে আজ সারাদিনই ব্যস্ত ছিল লরেন্স। তাঁর কথায়, “প্রথমে জেনেছিলাম আজই দিল্লি থেকে মৃতদেহ আসবে। কিন্তু এল না। সুভাষকে নিয়ে আমার গর্বিত। কখনও মনে হচ্ছে সুভাষ একটা বিরাট কাজ করে গেল। আবার কখনও মনে হচ্ছে এই কাজটা করার জন্য আরও অনেকেই তো ছিল। সুভাষই কেন চলে গেল। ও ছাড়া তো ওর পরিবারকে দেখার আর কেউ নেই।”
এমন দোলাচলের মধ্যেই বারলা পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। হাজারিবাগ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুভাষের বোনকে হাজারিবাগ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার ডেপুটি কমিশনার মনীশরঞ্জনের কথায়, “সুভাষ বেঁচে থাকলে প্রতি মাসে যা বেতন পেত সেই টাকা যাতে তার পরিবারের লোকজন পান তার জন্য জুরুহুরুর স্থানীয় মানুষ দাবি তুলেছেন। সেই দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাঠানো হবে। সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ তো একটা পাওয়ারই কথা। তার উপরে আর কী ব্যবস্থা করা যায় তা দেখা হচ্ছে।” শুক্রবার দুপুরে নিহত ওই জওয়ানের দেহ হাজারিবাগে আসার কথা বলেই জানিয়েছেন ডিসি। |
|
|
|
|
|