|
|
|
|
তথ্য তুলে তোপ অধীরের |
তৃণমূল আমলে শুধু ঘোষণা, কাজই হয়নি রেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বাংলার রেল প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলের বঞ্চনার অভিযোগের জবাব দিতে আজ দিল্লিতে ফের মুখ খুললেন অধীর চৌধুরী। এর আগেও লোকসভায় বাজেট বিতর্কে কিছুটা প্রথা ভেঙেই তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দেন রেল প্রতিমন্ত্রী। আর আজ একেবারে প্রকল্প ধরে ধরে তথ্য-পরিসংখ্যান
দিয়ে মমতার আমলে ঘোষিত প্রকল্পগুলির বাস্তব হাল দেখিয়েছেন তিনি। চলতি বাজেটে প্রকল্পপিছু অর্থ বরাদ্দের যুক্তি কী, তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন তিনি।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় মমতা-দীনেশ জমানায় ঘোষিত রেল প্রকল্পগুলির প্রকৃত অবস্থান জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেননি অধীর। কিন্তু আজ ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে বাংলার বড় মাপের ১৮টি প্রকল্পের বর্তমান হাল তুলে ধরেছেন তিনি। অধীরের কথায়, “শুধু ঘোষণার ফুলঝুরি! এমন অনেক প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে, যার বাস্তব ভিত্তিই নেই! ফলে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তাই গত তিন বছরে প্রকল্পপিছু যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তার ভিত্তিতেই চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।” সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বাংলার প্রকল্পগুলির অবস্থা ব্যাখ্যা করে রেল প্রতিমন্ত্রীর কটাক্ষ, “কেন্দ্রের বঞ্চনার স্লোগান এত দিন বামেরা তুলত! তৃণমূল সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চার মাসের মধ্যেই তুলতে শুরু করেছে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন চার বছরেও রাজ্যের জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?”
হঠাৎ এ ভাবে কেন সরব হলেন অধীর?
রেল বাজেটের পরই তৃণমূল অভিযোগ তোলে, প্রতিহিংসার বশেই কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্ব পরিকল্পিত ভাবে রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলিতে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন। মাসখানেকের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এবং জোট ভাঙার পরে এই প্রথম কোনও বড় মাপের নির্বাচন হবে রাজ্যে। কংগ্রেসের আশঙ্কা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেও বাংলার প্রতি বঞ্চনার বিষয়টি নিয়ে হাওয়া তুলে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে তৃণমূল। সে কারণেই অধীরের এই সক্রিয়তা।
তৃণমূলকে জবাব দিতে অধীর বেছে নিয়েছেন মমতা জমানায় ঘোষিত সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম বা লালগড়ের বিভিন্ন রেল প্রকল্প। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা ওই সব এলাকার জন্য বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অধীরের অভিযোগ, বাস্তবে সেগুলির কাজ হয়েছে সামান্যই। রেল মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, মমতা সিঙ্গুরে কৃষকদের জন্য ‘কিষাণ ভিশন’ প্রকল্প ঘোষণা করলেও চার বছরে সেই প্রকল্পে একটি টাকাও বরাদ্দ করেননি তৃণমূলের রেলমন্ত্রীরা! এমনকী মমতাও! তা ছাড়া যে জমিতে ওই কেন্দ্রটি গড়া হবে বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেখানে লরি পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা নেই! একই ভাবে নন্দীগ্রামের কাছে জেলিংহামে সেল ও বার্ন স্ট্যান্ডার্ড যৌথ উদ্যোগে ওয়াগন কারখানা গড়ে তুলবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, প্রকল্পের খসড়ায় অস্বচ্ছতা থাকায় এখনও দু’টি সংস্থার চুক্তিই দিনের আলো দেখেনি! কাজ শুরু তো দূরের বিষয়।
একই ছবি জঙ্গলমহল বা পাহাড়ের প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রেও। রেলমন্ত্রী হয়েই ওই দু’টি এলাকার জন্য একের পর প্রকল্প ঘোষণা করেন মমতা। ভাদুতলা থেকে ঝাড়গ্রাম ভায়া লালগড় নতুন রেল লাইন পাতার কাজে সমান অর্থ দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। কিন্তু ওই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত একটি টাকাও তৃণমূল সরকার মঞ্জুর করেনি বলে অভিযোগ। অধীরের কথায়, “রাজ্য সব দায়িত্ব রেলের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে অভিযোগ তোলার সহজ খেলায় নেমেছে।”
দার্জিলিং-এ টয় ট্রেন পরিষেবা গত তিন বছর ধরে বিপর্যস্ত হয়ে থাকলেও তৃণমূলের রেলমন্ত্রীরা তা পুনর্নিমাণে গা লাগাননি বলে অভিযোগ রেল প্রতিমন্ত্রীর।
অধীর বলেন, “শেষ পর্যন্ত হতাশ মোর্চা নেতারা আমাদের কাছে এসে বিষয়টি জানালে তৎপরতা শুরু হয়। রেল মন্ত্রকের নির্দেশে এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রয়োজনীয় অর্থ রাজ্যের পূর্ত দফতরকে মঞ্জুর করেছে সড়ক মন্ত্রক। মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকাকালীন আগেই ওই সামান্য কাজ সেরে ফেলতে পারতেন তৃণমূল নেতৃত্ব।” রাজ্যের বড় মাপের রেল কারখানাগুলি ছাড়াও ইস্ট-ওয়েস্ট ও অন্য মেট্রো প্রকল্পের কাজে রাজ্য কী ভাবে অসহযোগিতা করছে, তা-ও এ দিন জানান অধীর। |
|
|
|
|
|