দু’দিন আগেই বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এক দম্পতির উপরে চড়াও হয়েছিল রেল পুলিশের এক কনস্টেবল। তার বেধড়ক মারধরেই মহিলার স্বামী মারা যান বলে অভিযোগ। এ বার শিয়ালদহ রেল পুলিশের তিন কর্মী এবং এক যুবকের বিরুদ্ধে এক মহিলাকে হুমকি দিয়ে তাঁর ২৫ হাজার টাকা এবং কয়েক ভরি সোনার গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল।
রেল পুলিশ জানায়, ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্মেন্দ্র সিংহ (এএসআই), বিশ্বজিৎ দাস (কনস্টেবল), আলতাব হোসেন (কনস্টেবল) এবং সইদুল মোল্লা নামে চার জনকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা শিয়ালদহ রেল পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ বা এসওজি-র কর্মী। তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। সইদুল এসওজি অফিসে পিওনের কাজ করে। অধস্তনদের উপরে যথাযথ নজরদারি না-করার অভিযোগে এসওজি-র ওসি ঋগ্বেদ সাহাকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করেছেন শিয়ালদহ রেল পুলিশের ডিএসপি সুবোধ বলাধিকারী।
ওই মহিলাকেই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে বাপি সাহা নামে গড়িয়ার এক যুবককে খোঁজা হচ্ছে। দু’টি ঘটনায় রেল পুলিশের এক শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধেই যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। বহরমপুর ও শিয়ালদহের ঘটনায় রেল পুলিশের ভাবমূর্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
রেল পুলিশ জানায়, বছর সাতাশের ওই মহিলার বাড়ি বারাসতে। তাঁর স্বামী গাড়ি চালান। মহিলার অভিযোগ, মাসখানেক আগে দমদম স্টেশনের দেওয়ালে সাদা কাগজে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে তিনি এক যুবকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। সেই যুবক তাঁকে জানায়, তার নাম বাপি সাহা। বাড়ি গড়িয়ায়। বাপি তাঁকে বলে, ১৫ হাজার টাকা দিলে সে তাঁকে ছত্তীসগঢ়ে চাকরি জোগাড় করে দেবে। মহিলার দাবি, বাপিকে তিনি কয়েক হাজার টাকা দেন। ৪ মার্চ সকালে বাপি তাঁকে ফোন করে বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে যেতে বলে। মহিলা হাজির হলে বাপি তাঁকে একটি ট্যাক্সিতে চাপিয়ে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে ট্রেন ধরে পরের দিন রায়পুরে পৌঁছয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই মহিলা এসওজি-র অফিসে বসে জানান, সোমাইয়া নামে এক মহিলার বাড়িতে তাঁকে রেখে বাপি জানায়, ওই মহিলাই চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। দিন দুই পরে ওই মহিলা তাঁকে দেহ ব্যবসায় নামতে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না-হওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মহিলা বলেন, “৯ মার্চ কোনও ভাবে সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে রাতের ট্রেন ধরি। পরের দিন হাওড়ায় নামি। বাড়িতে ফিরে স্বামীকে সব জানাই।” মহিলার অভিযোগ, ১১ মার্চ সকালে বাপি তাঁকে ফোন করে শাসায়, বাকি টাকা না-মেটালে সে সোমাইয়াকে দিয়ে তাঁর নামে চুরির অভিযোগ দায়ের করাবে। তাঁর অসৎ চরিত্রের বদনাম রটিয়ে দেবে।
রেল পুলিশের কর্তাদের কাছে মহিলা অভিযোগ করেছেন, ১৩ মার্চ রাত ৯টা নাগাদ তিনি স্বামীর সঙ্গে বাইপাসের কাছে এক রেস্তোরাঁয় যান। লালবাজারের গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিয়ে চার যুবক তাঁদের কাছে যায়। তাদের সঙ্গে বাপিও ছিল। তারা তাঁকে বলে, তিনি রায়পুর থেকে তিন লক্ষ টাকা এবং চারটি মোবাইল চুরি করে এনেছেন। টাকা ও ফোন ফেরত না-দিলে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করা হবে। মহিলার অভিযোগ, তিনি তাদের কথা না-শোনায় তারা তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে গাড়িতে তুলে শিয়ালদহে এসওজি অফিসে নিয়ে যায়। তাঁকে বলা হয়, এখনই ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে তাঁরা ছাড়া পাবেন। তিনি বলেন, বাড়িতে টাকা আছে। ওই চার যুবক রাত ১২টা নাগাদ মহিলা ও তাঁর স্বামীকে নিয়ে বারাসতে যায়। ওই যুবকেরা ২৫ হাজার টাকা ছাড়াও তাঁর কয়েক ভরি গয়না কেড়ে নেয়।
ওই মহিলা এ দিন স্বামী এবং এক পরিচিতকে নিয়ে এসওজি অফিসে এসে ওসি-কে সব জানান এবং এএসআই ধর্মেন্দ্র সিংহ ছাড়া বাকি তিন জনকে শনাক্ত করেন। ধর্মেন্দ্র মহাকরণে কাজে গিয়েছিলেন। ফেরার পরে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। |