আর্জি ছিল মূলত দু’টি। মঞ্জুর হল একটি।
সিআইডি-র হেফাজতে ‘অসুস্থ’ বাবার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেলেন না মুন্না ইকবালের মেয়ে সাবা। তবে গোয়েন্দাদের জেরার সময় ইকবালের আইনজীবী সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে আদালত।
এ দিন আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে দু’টি আবেদন জানান অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা। এই মামলায় সদ্যনিযুক্ত সরকারি আইনজীবী শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় দু’টি আর্জি নিয়েই আপত্তি তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এতে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, আইনে এ বিষয়ে যা বলা আছে, সেটাই মেনে চলতে হবে।
দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর মেয়ের সাক্ষাতের আর্জি খারিজ করে দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায়। তবে জেরার সময় অভিযুক্তের আইনজীবী উপস্থিত থাকার আবেদন তিনি মেনে নিয়েছেন। মুন্নার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন বিচারক।
গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার তরফে এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। অশোকবাবু বলেন, হেফাজতে অভিযুক্তের জেরা চলাকালীন তাঁর আইনজীবীর সেখানে উপস্থিত থাকার অধিকার রয়েছে। আইনের খুঁটিনাটি বিষয় অভিযুক্তেরা জানেন না। তদন্তের পক্ষে প্রয়োজনীয় নয়, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে কেউ বাধ্য নন। ‘থার্ড ডিগ্রি’ অত্যাচারের আশঙ্কায় তদন্তকারীদের চাহিদামতো ভুল তথ্য দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারেন অভিযুক্তেরা। তাই জেরার সময় আইনজীবীদের উপস্থিতি জরুরি। এই নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি মামলার প্রসঙ্গ তোলেন অশোকবাবু। বিহারে পুলিশ লক-আপে অভিযুক্তদের চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ঘটনারও উল্লেখ করেন।
সরকারি আইনজীবী শ্যামাদাসবাবু বলেন, আইনে যা বলা আছে, তা মানতে সমস্যা নেই। তবে জেরার সময় নিয়মিত অভিযুক্তের আইনজীবীর উপস্থিতি তদন্ত-প্রক্রিয়ার ক্ষতি করবে। আইনজ্ঞ মহল সূত্রের খবর, ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে সাম্প্রতিক একটি সংশোধনী (ধারা ৪১ডি)-তে বলা হয়েছে, জেরা চলাকালীন অভিযুক্ত তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। কিন্তু জেরার প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনজীবীর থাকতে পারবেন না।
সওয়াল চলাকালীন অশোকবাবু বলেন, তাঁর মক্কেলের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা মধুমেহ, কিডনির অসুখ রয়েছে। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলতে হয়। সিআইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন মুন্না ঠিকমতো ওষুধপত্র এবং খাবার পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। কেস ডায়েরিতে অভিযুক্তের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখের দাবি তোলেন অশোকবাবু। অভিযুক্তের চিকিৎসার দিকে তদন্তকারীরা খেয়াল রাখছেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী।
মুন্নার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজন উদ্বেগে রয়েছেন বলে জানান অশোকবাবু। তাই মুন্নার মেয়েকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতির আবেদন জানানো হয়। এতে আপত্তি জানান সরকারি আইনজীবী। মুন্নার অন্যতম আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, অসুস্থ বাবার সঙ্গে মেয়ে দেখা করতে চাইছেন। এতে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়। গার্ডেনরিচে দাঙ্গা, হত্যার চেষ্টার মামলায় মুন্নাকে আদালতে তোলার দাবিও জানান তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু সেই আর্জিও মঞ্জুর করেননি বিচারক। |