গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার বিরুদ্ধে এ বার জোর করে জমি দখল করে বেআইনি বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠল। গার্ডেনরিচ থানায় মহম্মদ ইকবালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ফতেপুর ভিলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা রমজান আলি মোল্লা। পুলিশ জানিয়েছে, রমজানের অভিযোগ, তাঁর তিন কাঠা জমি কার্যত জোর করে হাতিয়ে নিয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল। অভিযোগ, ওই জমি কেবল দখলই করা হয়নি, সেখানে বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করেছেন মুন্না। পুলিশ সূত্রের খবর, রমজান কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) এবং কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছেও এই অভিযোগ জানিয়েছেন।
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠায় এলাকাছাড়া হতে হয়েছিল মুন্নাকে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ফের নতুন করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান রমজান আলি মোল্লা। পুলিশ জানিয়েছে, রমজানের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জমিতে সব ধরনের বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। |
পুলিশ জানায়, জে-২৭/এ এবং জে-২৭/ডি ফতেপুর ভিলেজ রোডে একলপ্তে তিন কাঠা জমি রয়েছে রমজানের। বছরখানেক আগে মুন্নার ঘনিষ্ঠ এক প্রোমোটার ওই জমি ঘিরতে শুরু করেন। জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে দেখে রমজানেরা ওই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে প্রথমে পুরসভার ১৫ নম্বর বরোয় অভিযোগ জানান। রমজানের অভিযোগ, ওই বরোর চেয়ারম্যান মুন্না কোনও ব্যবস্থা নেননি। পুরসভা কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রমজান এর পরে আদালতের দ্বারস্থ হন। পুলিশের কাছে রমজান দাবি করেছেন, আদালত ওই জমিতে নির্মাণের উপরে স্থগিতাদেশ দেয়। রমজানের অভিযোগ, এর পরেই মুন্না মাঠে নামেন। তিনি রমজানকে ডেকে হুমকি দেন, কারও বাধাতেই নির্মাণ বন্ধ হবে না। রমজানের কিছু করার থাকলে তিনি তা করে দেখান।
রমজানের অভিযোগ, “মুন্নার বিরুদ্ধে গার্ডেনরিচ থানায় একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েছি। আদালত থেকে পাওয়া স্থগিতাদেশের নির্দেশ সংবলিত রায় পুলিশকে দিয়ে এসেছি। তা সত্ত্বেও গত আড়াই মাস ধরে আমার জমিতে মুন্না নিজে দাঁড়িয়ে থেকে চার তলা পর্যন্ত বাড়ি তুলে ফেলেছেন। আমার ওই জমিটুকুই সম্বল। চোখের সামনে সেটা হাতিয়ে নেওয়া হল। এখন আমরা চাই, ওই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ।”
পুলিশ কী বলছে? গার্ডেনরিচ থানা সূত্রের খবর, যে সময়ে জমি ঘিরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তখন মুন্না রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে থানার কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন। পুলিশের এক কর্তার দাবি, এখন গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় মুন্না বা তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রোমোটারদের সব বেআইনি নির্মাণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের এই সক্রিয়তায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা। মুন্নার বিরুদ্ধে বন্দর এলাকায় দশটিরও বেশি বেআইনি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ জমা দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। বন্দর এলাকার এক পুলিশকর্তার দাবি, পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গার্ডেনরিচ এলাকায় ওই সব বেআইনি বাড়ি নির্মাণ এখন বন্ধ রয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসে গার্ডেনরিচের আলিফনগরে বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলতে গিয়ে মুন্নার দলবলের হাতে বন্দি হতে হয়েছিল বন্দর এলাকার পুলিশের একটি দলকে। অভিযোগ, পুলিশকর্মীদের অপহরণ করে আটকে রাখা হয় রামনগর মোড়ের ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যানের অফিসে। সেখানেই মুন্নার বেআইনি নির্মাণে পুলিশকর্মীরা বাধা দেওয়ায় তাঁদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সেখান থেকে পরে পুলিশকে কার্যত মাথা নিচু করে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে অবশ্য পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই ঘটনার নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ঘটনায় মুন্নার পাশাপাশি তার ছেলে ও দুই শ্যালক জড়িত। |