আমি কথা রেখেছি। এ বার আপনার পালা। সরাসরি মুখে না বললেও বাজেট বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের উদ্দেশে কার্যত এই বার্তাই দিলেন পি চিদম্বরম। তবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ওই বক্তৃতায় আরও এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত ঘোষণার যে প্রতিশ্রুতি অর্থমন্ত্রী দিয়েছিলেন, তা রাখেননি তিনি।
আগামী সপ্তাহেই ঋণনীতি পর্যালোচনায় বসছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অনেকেই মনে করছেন সেখানে সুদ কমানোর জন্য এখন থেকেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপর ‘চাপ বজায় রাখতে’ চাইছে কেন্দ্র। গতকালই সুব্বারাও লন্ডনে এক বক্তৃতায় চিদম্বরমের বাজেটকে দায়িত্বশীল বলে শংসাপত্র দিয়েছেন। কারণ, এ বার একই সঙ্গে রাজকোষ এবং চলতি খাতে বাণিজ্যিক লেনদেন ঘাটতি কমাতে চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। অনেকেই মনে করছেন, চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবং শিল্প কিছুটা মাথা তোলায় সুদ কমার সম্ভাবনা প্রায় মাঠে মারা যেতে বসেছিল। কিন্তু এখন সুব্বারাওয়ের ওই প্রশংসার পরে ফের এ নিয়ে আশার আলো দেখছেন তাঁরা। এ দিন লোকসভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাজকোষ ঘাটতি ৫.২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তা আরও কমাতে হবে।” একই সঙ্গে ফের তাঁর আশ্বাস, আগামী অর্থবর্ষে ওই ঘাটতি কমে হবে ৪.৮%। তার পরের তিন বছরে ধাপে ধাপে তা নেমে আসবে ৩ শতাংশে।
অনেকেই মনে করছেন, এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে কার্যত সুব্বারাওকেই সুদ কমানোর কথা মনে করিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী। কারণ, সুদ কমানোর শর্ত হিসেবে ঘাটতিতে রাশ টানার কথা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন সুব্বারাও।
অর্থ মন্ত্রকেরও আশা, আগামী সপ্তাহে সুদ অন্তত ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমবে। অর্থ বিষয়ক সচিব অরবিন্দ মায়ারাম বলেন, “আমাদের বিশ্বাস রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং বৃদ্ধির পক্ষেই ভোট দেবে। গভর্নর যা বলেছেন, তাতেও আমি খুশি।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে ঘাটতি ছাঁটাইয়ের প্রশংসা করেছে, ঠিক তা নিয়েই অবশ্য বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে চিদম্বরম। যেমন, বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশীর প্রশ্ন, সব ছেড়ে শুধু রাজকোষ ঘাটতি নিয়েই অর্থমন্ত্রী এত চিন্তিত কেন? চিদম্বরমের জবাব, বিজেপি আমলেও এই একই ধারা বজায় ছিল। তাঁর দাবি, “ঘাটতি না কমার ফল বিপজ্জনক হতে পারত। এর জন্যই মূল্যবৃদ্ধি কমছিল না। প্রধানমন্ত্রী ও আমি তাই এর পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি।”
অভিযোগ উঠেছিল, ঘাটতি কমাতে পরিকল্পনা খাতে খরচ কাটছাঁট করেছেন অর্থমন্ত্রী। বৃদ্ধির উপর যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। চিদম্বরমের পাল্টা যুক্তি, পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচ (বেতন, পেনশন ইত্যাদি) কমানোর সুযোগ তেমন নেই। তাই পরিকল্পনা খাতেই ব্যয় সঙ্কোচ করতে হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েও। কিন্তু চিদম্বরমের দাবি, বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে এলেও রাজস্ব আয় ১৬ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আগামী বছর বৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে গেলে, তা আরও বাড়বে। তা ছাড়া, আয়কর দফতর ৩৫ হাজার নোটিস পাঠাচ্ছে। যাঁরা আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, তাঁদেরই এই নোটিস পাঠানো হচ্ছে। |