কালো টাকা জমা দেওয়ার প্রস্তাবে লাল-কার্পেট অভ্যর্থনার অভিযোগ উঠল দেশের তিন বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠল ব্যাঙ্কের তরফ থেকে সেই টাকা সাদা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিরও।
বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট দাবি করে, সারা দেশে ওই তিন ব্যাঙ্কের বহু শাখায় একটি গোপন অনুসন্ধান (স্টিং অপারেশন) চালিয়েছে তারা। প্রথমে ফোনে, তার পরে শাখায় হাজির হয়ে ব্যাঙ্ক-কর্মীকে তাদের সাংবাদিক বলেন, কালো টাকা সাদা করতে চান এক প্রভাবশালী রাজনীতিক। সংবাদ-ওয়েবসাইটটির অভিযোগ, কোথাও বাধা পাওয়া তো দূরের কথা। বরং সর্বত্র লাল-কার্পেট অভ্যর্থনা পেয়েছেন তাঁরা। এই ব্যাঙ্কগুলি শুধু তাঁদের পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি বা কেওয়াইসি না-চাওয়ার সুবিধা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। বরং কী ভাবে ওই কালো টাকা সাদা করা সম্ভব, তার জন্য বিভিন্ন ‘উদ্ভাবনী’ পরামর্শও দিয়েছে তারা।
ওয়েবসাইটটির দাবি, গোপন ক্যামেরায় তোলা এই ধরনের কয়েকশো ঘণ্টার ভিডিও মজুত রয়েছে তাদের ভাঁড়ারে। তদন্তের জন্য যা বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক ও তদন্তকারী সংস্থার হাতে দিতে রাজি তারা। তবে ঠিক কখন ওই ছবি তোলা হল কিংবা শেষ পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেনি তারা।
অবশ্য অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তিন ব্যাঙ্কই। তাদের দাবি, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি সম্পর্কে সব তথ্য যত শীঘ্র সম্ভব খুঁজে বার করা হবে। তবে সার্বিক ভাবে তারা কখনওই এ ধরনের কাজে লিপ্ত থাকে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, এই অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। তবে তার আগে তার সম্পূর্ণ সত্যতা প্রমাণ হওয়া জরুরি। কারণ কখন, কোন ব্যাঙ্কের কোন শাখায় কী ভাবে ওই তদন্তমূলক কাজ চালানো হয়েছে, এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে অনেক কিছু সম্পর্কেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে ঘোর সমস্যার মুখে পড়বে ব্যাঙ্কগুলি। প্রশ্ন উঠবে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং তা নিয়ন্ত্রণের নিশ্ছিদ্রতা নিয়ে। বিশেষত যখন কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে দ্রুত ব্যাঙ্ক খোলার ছাড়পত্র দিতে বেশ কিছু দিন ধরেই জোরালো সওয়াল করছে কেন্দ্র। এই পথ মসৃণ করতে ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারিও করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
ওয়েবসাইটটির অভিযোগ, তাদের প্রতিনিধিরা যখন কালো টাকাকে সাদা করার প্রস্তাব দিয়েছেন, তা সাগ্রহে লুফে নিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। কেওয়াইসি কিংবা প্যান কার্ড চাওয়ার কথা তো বলাই হয়নি। বরং তাঁদের জানানো হয়েছে, কী ভাবে বেনামি অ্যাকাউন্টে রেখে, বিমা কিংবা সোনায় খাটিয়ে, কৃষিজীবীর পরিচয় দিয়ে, বিশেষ লকার খুলে অথবা এ রকম আরও হাজারো উপায়ে জমা দেওয়া টাকা সাদা করে দিতে পারবে তারা। যে অভিযোগ শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হলে, দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। |