ভ্যাটিকানের বেড়া ভাঙছেন ব্যতিক্রমী পোপ
ছর বারোর আগের কথা। বুয়েনোস এয়ারেসের মুনিজ হাসপাতালে এড্স-আক্রান্তদের দেখতে এসেছেন আর্চবিশপ, দেশের প্রধান ধর্মযাজক। হঠাৎ এক নার্সের কাছ থেকে এক ঘটি জল চেয়ে নিলেন তিনি। পা ধুয়ে দিলেন ১২ জন রোগীর। তার পর সবাইকে চমকে দিয়ে পায়ে চুমু খেলেন এড্স-আক্রান্তদের। সাংবাদিকদের পরে তিনি বলেছিলেন, “গরিব আর অসুস্থ মানুষদের বড় তাড়াতাড়ি ভুলে যায় আমাদের সমাজ!”
সে দিনের সেই আর্চবিশপ আজকের পোপ ফ্রান্সিস। ব্যতিক্রমী, উদারচেতা, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে যথেষ্ট কট্টরপন্থীও বটে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের মতোই প্রবল ফুটবলপ্রেমী। প্রিয় দল বুয়েনোস এয়ারেসের সান লোরেনজো। আজের্ন্তিনায় থাকাকালীনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, গাড়ি নয়, বাসে চড়তেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ। দেখা গেল, ১২০ কোটি রোমান ক্যাথলিকের ধর্মগুরু হওয়ার পরেও তাঁর স্বভাব বদলায়নি। ভ্যাটিকানের মধ্যে ঘোরাঘুরির জন্য যে ‘ভ্যাটিকান ওয়ান’ লিমুজিন রাখা হয়েছিল, গত কাল সেই বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে অস্বীকার করেন পোপ ফ্রান্সিস। অন্য সব কার্ডিনালের সঙ্গে উঠে পড়েন ভ্যাটিকানের নিজস্ব মিনিবাসে।
রোমের ব্যাসিলিকা অফ সান্তা মারিয়া গির্জায় নতুন পোপ। ছবি: রয়টার্স
সাধারণ পরিবারে জন্ম হওয়া, রেলকর্মী বাবার ছেলে বের্গোলিও। ছেলেবেলায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে একটি ফুসফুস খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। প্রধান সারির ধর্মযাজক হওয়ার পরে বিপুল বৈভবের মধ্যে পড়েও সেই ‘শ্রমিক-শিকড়’কে কখনও অস্বীকার করেননি বের্গোলিও। পোপ হওয়ার পরেও করলেন না। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ফেদেরিকো লোম্বার্দি জানিয়েছেন, কার্ডিনালদের সঙ্গে নৈশভোজ সেরে পোপ চলে যান কার্ডিনালদের জন্য বিশেষ ‘ক্লার্জি হাউজ’-এ। নিজেই ব্যাগপত্তর গুছিয়ে ঘর ভাড়া মিটিয়ে দেন। আপাতত কয়েক দিন তিনি অন্য কার্ডিনালদের সঙ্গে যাজকদের বাসভবন ‘কাসা সান্তা মার্তা’য় থাকবেন। পোপের বাসভবন গোছাতে দিন কয়েক লাগবে। পোপের কড়া নির্দেশ, সজ্জায় কোনও রকম বাহুল্য যেন না করা হয়।
বারোশো বছরের ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে এই প্রথম অ-ইউরোপীও কোনও দেশ থেকে পোপ নির্বাচিত হলেন। আমেরিকা উপমহাদেশের প্রথম পোপকে কাল অভিনন্দন জানান প্রথম মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সম্ভাব্য পোপ হিসেবে যে ক’জনের নাম শোনা যাচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে বের্গোলিও ছিলেন না। তাই আর্জেন্তিনীয়ের নাম ঘোষিত হওয়ার পরে অনেকেই চমকে যান। বিস্মিত খাস আর্জেন্তিনার মানুষও। ব্রাজিলের এক ধর্মযাজক লিওনার্দো বফের কথায়, “রোমের চার দেওয়ালের বাইরে, এক উন্নয়নশীল দেশ থেকে এসেছেন বের্গোলিও। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এ এক বিরলতম ঘটনা।” কিন্তু বিতর্ক-বিধ্বস্ত ভ্যাটিকানের সামনে বের্গোলিওই ছিলেন সম্ভবত প্রথম পছন্দের। এই পছন্দের ভিত্তি এক দিকে বের্গোলিও-র দীর্ঘ ও ব্যতিক্রমী যাজক-জীবন। অন্য দিকে, খ্রিস্ট ধর্মে রোম-সহ ইউরোপের আধিপত্য কমানোর একটা তাগিদ। কারণ জনসংখ্যার নিরিখে বিচার করলে অধিকাংশ ক্যাথলিকেরই বাস দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে। তার মধ্যে আর্জেন্তিনাতেই রয়েছেন ৪০ শতাংশ। পোপ ফ্রান্সিসের নির্বাচন তাই খ্রিস্টধর্মকে তার ইউরোকেন্দ্রিকতা থেকে বার করে পৃথিবীর অন্য ‘প্রান্তে’ নিয়ে যাওয়ার এক সাহসী পদক্ষেপ।
নতুন পোপকে শুভেচ্ছা জানাতে শিল্পী সুদর্শন পট্টনায়েকের বালি-ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার, পুরীতে। ছবি: এএফপি
দেশের প্রধান ধর্মযাজক থাকাকালীন গির্জার চার দেওয়াল থেকে বেরিয়ে হর-হামেশা চলে যেতেন বস্তিতে। পোপ-জীবনের প্রথম ২৪ ঘণ্টা বলে দিচ্ছে, বেড়া ভাঙার প্রবণতা পুরোদস্তুর বজায় রেখেছেন ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানের রীতি অনুযায়ী, নির্বাচিত হওয়ার পরে পোপ তাঁর বিশেষ সিংহাসনে বসবেন। অন্য সব কার্ডিনাল এসে অভিনন্দন জানাবেন। কিন্তু কাল ফ্রান্সিস নিজেই সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। তাঁকে নির্বাচন করার জন্য প্রত্যেক কার্ডিনালের হাত ধরে ধন্যবাদ জানান।
তবে এই নিবার্চন কি শুধুই বের্গোলিও-র গণ্ডি ভাঙার প্রবণতাকে কুর্নিশ? কিছু ক্ষেত্রে বের্গোলিও তো প্রবল কট্টরপন্থীও। সমকামীদের বিয়ে, গর্ভপাত, কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে মেয়েদের ব্রাত্য করে রাখা এ রকম বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বের্গোলিও-র দৃষ্টিভঙ্গি রোমান ক্যাথলিক চার্চের মতাদর্শের সঙ্গে সম্পূর্ণ খাপ খেয়ে যায়। এই প্রাচীনপন্থার জন্য আর্জেন্তিনার বর্তমান বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্শনারের সঙ্গে সরাসরি তরজাতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সমালোচনার মুখে পড়েন বহু মানবাধিকার, সমকামী ও মহিলা সংগঠনের। পোপ ফ্রান্সিসের নির্বাচনের মাধ্যমে তাই ‘প্রান্ত’কে ‘কেন্দ্রে’ নিয়ে আসার কাজটি সম্পূর্ণ হল না। সূচনাটুকু হল মাত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.