রেখেঢেকে আর নয়। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক আবার সরাসরি সংঘাতের পথে গেল।
এক দিকে পাক নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতি কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ভারত। অন্য দিকে, আফজল গুরুর ফাঁসির সমালোচনা করে প্রস্তাব গ্রহণ করল পাক পার্লামেন্ট। ফের খুঁচিয়ে তুলল কাশ্মীর প্রসঙ্গও।
সম্প্রতি একের পর এক ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে আহত হচ্ছিলই। নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় জওয়ানের মাথা কেটে নেওয়া, হায়দরাবাদ বিস্ফোরণ এবং গত কাল শ্রীনগরে সন্ত্রাসের পরে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলে কেন্দ্র।
কার্গিল যুদ্ধের পর যে ভাবে জাতীয়তাবাদকে মূলধন করে ভোটে গিয়েছিল বাজপেয়ী সরকার, ২০১৪-র নির্বাচনের আগে তারই পুনরাবৃত্তি করতে চাইছেন মনমোহন। সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফ নয়াদিল্লি এসে ঘরোয়া বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কার্যত তা প্রত্যাখ্যান করেছে সাউথ ব্লক। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ পাক প্রধানমন্ত্রী আশরফের সঙ্গে জয়পুরে মধ্যাহ্নভোজন করেছেন ঠিকই, কিন্তু কোনও কূটনৈতিক আলোচনা করা হয়নি। এ বার দু’দেশের মধ্যে যে সব আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ নিয়ে মতৈক্য হয়েছিল, সে সবও বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
জানুয়ারি মাস থেকেই উদার ভিসা নীতি স্থগিত রেখেছিল দিল্লি। পাকিস্তানের বয়স্ক নাগরিকদের ভারতে আসামাত্র ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। সেটা বাতিল করে দেওয়া হয়। এ বার পর্যটকদের জন্য গ্রুপ ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই পথ নেওয়া হচ্ছে। আগামিকাল থেকে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা ছিল। আপাতত সেটা আর হচ্ছে না।
শ্রীনগরের হামলার জন্যও আজ সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদীদের শরীর তল্লাশি করে দু’টি ডায়েরি মিলেছে। যার মধ্যে পাকিস্তানের ফোন নম্বর মিলেছে। একটি বেটনোভেট মলমের টিউব মিলেছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সেটি করাচির গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন পাকিস্তান লিমিটেডের কারখানায় তৈরি। টিউবে সংস্থার নামটি উর্দুতে লেখা ছিল। হিজবুল এই ঘটনার দায় স্বীকার করলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ, গত কালের হামলার পিছনে আসলে রয়েছে লস্কর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, লস্কর-ই-তইবার পরিকল্পনাতেই হামলা হতে পারে। সেখান থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হিজবুল মুজাহিদিনের নাম ব্যবহার করা হতে পারে। এমনিতেই আফজল গুরুর ফাঁসি নিয়ে উপত্যকা উত্তপ্ত। পরিস্থিতি আরও বিগড়ে দিতে হিজবুলের ডেপুটি চিফ সাইফুল্লা খালিদকে দিয়ে আরও কিছু হামলা চালানো হতে পারে। শিন্দের বক্তব্য, “পাক কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলির দিকে নজর রাখছি।” এই মূহূর্তে সেখানে ৪২টি শিবির রয়েছে বলে রিপোর্ট মিলেছে। বিজেপির যথারীতি সরকারের বিরুদ্ধে নরম হওয়ার অভিযোগ তুলছে। শিন্দে জবাবে বলেছেন, “এখানে কেউ চুড়ি পরে বসে নেই।”
ভিসা নীতিতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত বস্তুত পাক পার্লামেন্ট আজ আফজল প্রস্তাব নেওয়ার আগেই নিয়ে ফেলেছিল কেন্দ্র। আফজল এবং কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলে সেই কূটনৈতিক দ্বৈরথকেই তুঙ্গে পৌঁছে দিল পাকিস্তান। আজ পাকিস্তানের প্রস্তাবে শুধু আফজলের ফাঁসির নিন্দা নয়, আফজলের দেহ তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে। পাক পার্লামেন্টের বক্তব্য, “কাশ্মীর সমস্যার সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চোখ বন্ধ করে থাকা উচিত নয়। কাশ্মীরে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব কার্যকর করা উচিত।”
এই পরিস্থিতিতে পাক বিরোধিতাকে সম্বল করা ছাড়া গত্যন্তরও থাকছে না মনমোহন সরকারের। দলের একটা অংশ যদিও মনে করছে যে, আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ফলেই কাশ্মীর উপত্যকার শান্তি ফের বিঘ্নিত হল। কিন্তু ইউপিএ নেতৃত্ব এই তত্ত্ব খারিজ করে দিচ্ছেন। বরং বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি যে ভাবে পাক সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হচ্ছে, জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে সেই বিরোধিতাকে কার্যত ভোঁতা করে দেওয়াই কাজের কাজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। |