নিজের সম্পত্তি ফিরে পেতে বড় ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেন ৯২ বছরের এক বৃদ্ধা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাগনপুর গ্রামের অলকা শীল নামে ওই বৃদ্ধা অভিযোগ করেছেন, ছেলে সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়া ছাড়াও তাঁকে বাড়ি থেকে উৎখাত করেছেন। বৃহস্পতিবার অন্য তিন ছেলেমেয়ের সঙ্গে আদালতে গিয়ে মামলা করা ছাড়াও পূর্বস্থলী থানা, পূর্বস্থলী ১ বিডিও এবং কালনার মহকুমাশাসকের কাছে এই অভিযোগ করেছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে অলকাদেবী জানান, বর্তমানে তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছেন। বছর ত্রিশ আগে স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি বড় ছেলে পুলিনচন্দ্র শীলের সঙ্গে থাকতেন। পুলিনবাবু পূর্বস্থলী ১ বিএলএলআর দফতরের কর্মী। অলকাদেবীর অভিযোগ, “স্বামীর তৈরি একটি মাটির ঘর ছিল। সেটি ভেঙে বড় ছেলে একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে ও নিজের নামে লিখিয়ে নেয়। আমার নামে থাকা মোট ২৬ শতক জমিও ভুল বুঝিয়ে লিখিয়ে নেয়। ২০০৬ সালে এ সব লিখিয়ে নেওয়ার পরেই বড় ছেলে ও বৌমা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে।” বৃদ্ধা আরও অভিযোগ করেন, সমস্ত সম্পত্তি হাতে পাওয়ার পরে বড় ছেলে তাঁর ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয় নেন ছোট মেয়ের কাছে। নিজের বাড়িতে বাকি জীবন কাটাতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। |
অলকাদেবীর ভাই ধীরেন্দ্রকুমার মজুমদার বলেন, “আমিও ওই গ্রামে থাকি। এই বয়সেও দিদিকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। মাঝে-মধ্যে আমার কাছেও এসে থেকেছে।” বৃদ্ধার মেজো ছেলে রতনকুমার শীলের অভিযোগ, “আমি ও ভাই ব্যবসার কারণে গুজরাতে থাকি। সেখান থেকে মাকে সাধ্য মতো টাকা পাঠাতাম। তবু দাদা-বৌদি মায়ের উপরে অত্যাচার করত। মাস তিনেক আগে ওরা মাকে অসুস্থ ছোট বোনের কাছে দিয়ে আসে। তার পরে আর খোঁজ নেয়নি। এর প্রতিবাদ জানাতেই আমরা ছুটে এসেছি।” তাঁর দাবি, “সব ছেলেমেয়েই মায়ের সম্পত্তির ভাগীদার। অথচ বড়দা মায়ের নামের সমস্ত কিছু হাতিয়ে নিয়েছে।”
অলকাদেবী অভিযোগ করেন, পুত্রবধূ মাঝে-মধ্যে তাঁকে হাতা-খুন্তি দিয়ে মারধরও করতেন। তাঁর দাবি, “ছোট মেয়ের অসুখ বেড়েছে জানিয়ে এক দিন হঠাৎ আমাকে মেয়ের বাড়ি রেখে আসা হয়।” তাঁর ছোট ছেলে গৌতম শীলের বক্তব্য, “দাদা অন্যায় করছে জেনেও আমরা আগে প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু যখন বাড়িতেও মাকে ঠাঁই দিল না, আমরা আর বসে থাকতে পারলাম না।”
পুলিনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “মায়ের সম্মতি ছাড়া কোনও কিছুই আমি নিজের নামে লিখিয়ে নিইনি। মায়ের সঙ্গে এক বার মুখোমুখি বসে কথা হলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।” এ সবই ভাইদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি তাঁর। বৃদ্ধার আইনজীবী সিদ্ধার্থশঙ্কর মণ্ডলের বক্তব্য, “অলকাদেবীকে ঠকানো ও তাঁর উপরে অত্যাচারের ব্যাপারে এসিজেএম আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।” কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “বৃদ্ধার উপরে অত্যাচারের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” |