পরীক্ষার্থীর শিশুকে দুধ দিয়ে বাঁচালেন শিক্ষিকাই
চৈত্র-ফাগুনে বৃত্তটা পূর্ণ হল। বছর পার করে ফের সেই স্কুলে ফিরে এলেন তিনি।
তবে এ বার অ্যাম্বুল্যান্সে নয়। এ বার তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়নি কোনও শিক্ষিকাকে।
এক বছর আগের সেই দিনটা ছিল ৩১ মার্চ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে মিনিট দশেক বাকি। হঠাৎই বর্ধমানের মেমারিতে দেবীপুর স্টেশন গার্লস হাইস্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে পড়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স।
এক আসন্নপ্রসবা যে এই ক’দিন পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছে, কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। অ্যাম্বুল্যান্সের হুটারের শব্দে সকলে ছুটে এসে দেখেন, দরজা খুলে নামছেন মেমারি রসিকলাল গার্লস হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিতে আসা শর্মিলা মুর্মু। সঙ্গে কাপড়ে মোড়া সদ্যোজাত। সে শিশুর সেটাই প্রথম সকাল।
মেমারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমেই শর্মিলা ছোটেন হলে। আর শিশু কোলে টিচার্স রুমে বসে থাকেন তাঁর এক মামি। কিন্তু মাকে ছাড়া ওই দুধের শিশু কতক্ষণ থাকবে? পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির স্বাস্থ্যকর্মী
লায়লি মণ্ডলের কথায়, “বাচ্চার ঠোঁট-গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। মায়ের দুধ না পেলেই নয়।”
কিন্তু মা তো তখন দর্শনের উত্তর লিখতে ব্যস্ত। তাঁকে বিরক্ত করা কি ঠিক হবে? সকলেই কমবেশি বিভ্রান্ত। তখনই পরীক্ষার হল ছেড়ে এসে উঁকি দেন শিক্ষিকা বৈশাখী রায় “কী হয়েছে গো?” বাচ্চাটা দুধ পাচ্ছে না। “বাড়িতে আমার দশ মাসের মেয়ে আছে। আমি দুধ খাওয়াতে পারি?”
বৈশাখীর সঙ্গে ছেলে কোলে শর্মিলা। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী
সকলে অবাক। এ-ও হয়?
“ওরা বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য শর্মিলাকে ডাকতে চাইছিল। কিন্তু ও আসবে কী করে? আমি চাইছিলাম, ও নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিক। তাই একটু ভয়ে-ভয়েই জিগ্যেস করলাম, আমি খাওয়াতে পারি কি না। ওরা রাজি হয়ে গেল!” একগাল হাসেন সংস্কৃত শিক্ষিকা। আর তাঁর হাত চেপে ধরে শর্মিলা বলেন, “ওই দিন ভাগ্যিস দিদিমণি ছিলেন। নইলে আমার বাচ্চাকে কে বাঁচাত!”
কিন্তু এ ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার কী দরকার ছিল? কঠিন হয় শর্মিলার মুখ “বন্ধুরা এগিয়ে যেত! তাই ব্যথা চেপে পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছি।” তাতে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। বাংলায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। “অন্য সব পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম। বাংলার দিন ভীষণ ব্যথা না উঠলে এ বার আর ফিরে আসতে হত না।”
সে দিনের সেই শিশু এখন প্রায় এক বছরের দস্যি। মায়ের পরীক্ষা থাকায় সে-ও এসেছিল দিদার কোলে চেপে। দিদা লক্ষ্মী কিস্কুও বারবার ধন্যবাদ দেন বৈশাখীকে। তিনি উল্টে বলেন, “আরে, আমিও তো এক জন মা! খাওয়ার পরে ওকে সুস্থ হতে দেখে কী যে ভাল লেগেছিল!”
প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা ভট্টাচার্য হাসেন, “ও এমনই সাদাসিধে। ওকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, আগুপিছু কিছু না ভেবেই কাণ্ডটা করেছে।” শিক্ষিকা শম্পা ভট্টাচার্য, অনামিকা মণ্ডলেরাও একবাক্যে সায় দেন। বৈশাখীর স্বামী, পেশায় ইঞ্জিনিয়র দীপঙ্কর সাউও বলেন, “ও এই রকমই। কারও বিপদ শুনলেই হল, ছুটে যাবে।”
পরীক্ষা শেষ। ছেলে কোলে বাড়ির পথ ধরলেন শর্মিলা।
ফেরার ট্রেন ধরলেন বৈশাখীও। হাওড়ার বেলুড় স্টেশনে নেমে গ্যারাজ থেকে সাইকেল বের করতে করতে বললেন, “রোজ ঘুম থেকে উঠছি, স্কুলে যাচ্ছি একটানা এই করে যেতে ভাল লাগে না। ইচ্ছে করে, আমার যতটুকু আছে তা নিয়ে কারও কাজে যেন লাগতে পারি।”
আর, তোমার মেয়ে?
“আরে জানো, ও তো আজই প্রথম নার্সারি স্কুলে গেল। ওর নাম দেবোপমা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.