হুল্লোড় |
সহবাগের ব্যাটিং আজ যেন জনের অভিনয় |
|
অতীতে বিসিসিআই-কে নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছে। তবে ইদানীং যেন বিসিসিআই-এর এক নতুন রূপ দেখছি। এ যেন আগের সেই উদ্ধত, স্বার্থপর, ক্ষমতালোভী এবং অর্থলোভী সংস্থা নয় যাকে আমরা ঘৃণা করতেই ভালবাসতাম। এই বিসিসিআই যেন মানবিকতার প্রতিমূর্তি। এমন এক সংস্থা যে তার খেলোয়াড়দের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মী। এমনকী ক্রিকেট অনুরাগীদের মতামতেরও যথেষ্ট মূল্য দেয়। এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
বিসিসিআই-এর গৌতম গম্ভীরকে টিম থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার ঘটনাটা সবার জানা। সিদ্ধান্তটা গম্ভীরের দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং ওপেনিং পার্টনার বীরেন্দ্র সহবাগকে কষ্ট দিয়েছিল খুব। সহবাগ দুঃখে এতটাই মুষড়ে পড়েছিলেন যে তাঁর নিজের আর গম্ভীরের একটা ছবি ট্যুইট করে লিখে দেন, “উইল মিস ইউ চ্যাম্প।’’
এই মর্মস্পর্শী ট্যুইটের জের ছিল এতটাই যে যশরাজ ফিল্মসের স্ক্রিপ্ট রাইটাররা না কি রাতারাতি তাদের কফি মাগ আর সিগারেট ছুড়ে ফেলে ‘যব তক হ্যায় জান’-এর সিকোয়েল লিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। অনেক মহিলাই শয্যা নিয়েছিলেন ওই আবেগপ্রবণ ট্যুইট দেখে। আর হার্টের রুগিদের কথা কী আর বলব! তাদের তো একেবারে হাসপাতালে নিয়ে দৌড়তে হয়েছিল। এমনকী বিসিসিআই-এর মতো সংস্থাতেও না কি কারও কারও ধরা গলা বা চোখে জল আসতে দেখা গিয়েছিল। এ রকম কাঁপিয়ে দেওয়া ঘটনা বিসিসিআইতে ঘটেছিল আরও এক বার। সে বার মাননীয় বিসিসিআই সভাপতিকে এক পাগল গিয়ে থাপ্পড় মেরে আসে। |
যে কোনও দৃশ্যে জনের অভিনয় আজও নড়বড়ে |
কিন্তু জীবন তো আর তা বলে থেমে থাকবে না। সহবাগ তাই যথারীতি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু স্কোরবোর্ডে তাঁর ২, ১৯, ৬ স্কোরের ধরন দেখেই বোঝা গিয়েছিল মুরলী বিজয়ের সঙ্গটা তিনি মোটেই ঠিক উপভোগ করতে পারছিলেন না। ভক্তরাও সহবাগকে এই ফর্মে দেখে মোটেই খুশি হননি। এক সময় যে বীরু ব্যাটিং করলে মনে হত সামুরাই যোদ্ধা যুদ্ধ করছেন, আজ মনে হয় যেন চামচ দিয়ে নুডলস খাচ্ছেন। তাঁর দিকে ধেয়ে আসা যে বলকে তিনি প্রায় মাছি তাড়ানোর কায়দায় অবলীলায় বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতেন, সেই বলই যেন নিউক্লিয়ার বোমার মতো তাঁকে ঘায়েল করতে এগিয়ে আসছিল তখন। সানি দেওলের নাচ বা জন আব্রাহামের অভিনয় যেমন লাগে, সহবাগকে সে রকম আজব দেখতে লাগছিল। ঠিক যেন রাজীব শুক্ল স্যুট পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এমন এক কিম্ভুত দৃশ্য।
দু’টো টেস্ট ম্যাচের পরই বিসিসিআই অবশ্য বীরেন্দ্র সহবাগকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ঘটনাটা নিশ্চয়ই দুই ‘বিছড়া হুয়া’ ভাইকে এক করে দিয়েছে। দুই ভাই তো একে অপরকে পেয়ে দারুণ খুশি! কেউ কেউ তো এমনও বলছেন যে এই কর্মের জন্য আগামী বছর বিসিসিআই নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নও পেতে পারে।
বীরু যদিও তাঁর এই অবসর সময়টা বেশ ভাল উপায়ে কাটাবেন মনস্থ করেছেন। সহবাগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হয়েছেন রান-রেটের হিসাবটা ঠিকঠাক শিখবেন বলে। ‘কহানি’ সিনেমাটাও আরও কয়েকবার দেখতে চান তিনি। কথা দিয়েছেন যতক্ষণ না বিদ্যা বালনের স্বামীকে খুঁজে বের করতে পারছেন, ততক্ষণ থামবেন না।
পঞ্জাবে পুলিশ ১৩০ কোটি টাকার এক হেরোইন চক্রের সন্ধান পেয়েছে। ড্রাগচক্রের মাথা ভারতের অলিম্পিক পদক বিজয়ী বক্সার বিজেন্দ্র সিংহকে চেনেন বলে দাবি করেছেন। বিজেন্দ্রর বন্ধু, বক্সার রাম সিংহ স্বীকারও করেছেন ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে প্রায় বার তিন-চার তিনি বিজেন্দ্রর সঙ্গে গিয়ে হেরোইন কিনেছেন। শেষ শোনা খবর অনুযায়ী বিজেন্দ্র পরামর্শ নেওয়ার জন্য নাকি ক্রিকেটার হরভজন সিংহকে পাগলের মতো ফোন করছিলেন। মনে হয় বিজেন্দ্র ‘ড্রাগ হেরোইন’-এর বদলে সিনেমার ‘হিরোইন’ চেয়েছিলেন এমন বলার জন্য তাঁকে কেউ পরামর্শ দিয়েছিল। খানিকটা ‘মাঙ্কি’কে ‘মা কি’ বলার মতো একটা অজুহাত আর কী! |
চশমা পরার পর থেকেই টিম থেকে বাদ |
গত বছরের আইপিএল শেষে মুম্বইয়ের একটা ‘রেভ’ পার্টিতে মহারাষ্ট্র পুলিশ ক্রিকেটার রাহুল শর্মা আর ওয়েন পার্নেলকে ড্রাগস নেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছিল। টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় এই দুই খেলোয়াড়কেই মহারাষ্ট্র পুলিশ এ বার সরকারি ভাবে অভিযুক্ত করবেন। রাহুল শর্মা বলেছিলেন যদি ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হন তা হলে খেলা ছেড়ে দেবেন। সেই থেকেই রাহুলকে আর ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যায়নি। মনে হয় বিসিসিআই তাঁর এই প্রত্যাশা পূরণ করেছে।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে ওয়েন প্যার্নেলের আদেশেই না কি রাহুল শর্মা সেদিন পার্টিতে গিয়েছিলেন। আর সেই নিমন্ত্রণ এসেছিল মডেল-অভিনেত্রী সোফিয়া হায়াতের কাছ থেকে। সোফিয়াকে যে সব কারণে মানুষ চেনেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটা হল যে তিনিই নাকি দুনিয়ার একমাত্র মডেল যাঁর সঙ্গে ক্রিকেটার ইশান্ত শর্মার চেহারার মিল আছে। আর একটা কারণেও লোকে তাঁকে চেনে। ক্রিকেটার রোহিত শর্মার সঙ্গে ডেট করেছিলেন এবং ঘটা করে ট্যুইটার সাক্ষী রেখে তাঁকে ত্যাগও করেছিলেন!
প্রাক্তন ক্রিকেটার অজয় শর্মা সারা জীবনেও ‘শর্মা’ পদবিধারীদের যে ক্ষতি করতে পারেননি, সোফিয়া ইতিমধ্যেই সেই ক্ষতি করে দিয়েছেন।
প্রাক্তন অষ্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ডিন জোন্স বিসিসিআই-কে উদ্দেশ করে এমন এক মনোমুগ্ধকর প্রবন্ধ লিখেছেন যে অনেকেই নাকি বলছেন ওই লেখাটা লেখার সময় জোন্সকে নাকি বিসিসিআই অফিসের বাইরের মেঝে চাটতে দেখেছেন। একজন ভারতীয় কোচ হতে গেলে সব চেয়ে বেশি যা দরকার বিসিসিআই-এর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য সেটা জোন্স-এর আছে। তাই খবরে জানা যাচ্ছে কয়েক মাসের ভেতরেই ডানকান ফ্লেচারের মেয়াদ শেষ হলে ডিন জোন্সই না কি তাঁর জায়গা পেতে চলেছেন।
সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে সেই নাটকীয় মুহূর্তের জন্য প্ল্যান করে রাখা সব পার্টিই হয়তো ক্যানসেল করতে হতে পারে। |
|