ফুল দিয়ে সাজানো ঘর। মন্দিরে পুজো দেওয়া হল। রান্না হল পায়েস। পরে তা উলুধ্বনি দিয়ে শিশুর মুখে তুলে দিলেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী। বুধবার এ ভাবেই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হল অনাথ শিশুর অন্নপ্রাশন। শিশুটি পেল পাতানো মামা ও দাদু।
সাত মাস ধরে ওই শিশুর ঠিকানা জেলা হাসপাতাল। শিশু বিভাগের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা ওকে আগলে রেখেছেন। মাসখানেক আগে তাঁরা তার নামকরণ করেন আবির। বুধবার সাড়ে ৭ মাস বয়সের আবিরের মুখে ভাত আয়োজন করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শিশুর মুখে পায়েস দেন শিশু বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। আবীরের মুখে ভাত অনুষ্ঠান উপলক্ষে শিশু বিভাগকে এ দিন ফুল দিয়ে সাজানো হয়। দুপুরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসাধীন প্রায় তিনশো রোগীর মধ্যে মিষ্টি, কেক ও ফল বিলি করেন। অনুষ্ঠান দেখে বোঝার উপায় ছিল না আবির অনাথ শিশু। নীলাঞ্জনবাবু ও অন্য বিশেষজ্ঞ অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় আবিরকে এ দিন ভাগ্নে ও নাতি পাতিয়ে নেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন সুনীলকুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, “গত সাত মাস থেকে যেভাবে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও আয়ারা আবীরকে আগলে রেখেছেন সেটা না দেখে কেউ বিশ্বাস করবে না। ওঁদের যত্ন ছাড়া শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হত না।” শিশুকল্যাণ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাসে ওই শিশুকে দত্তক চেয়ে একশোরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য দম্পত্তির হাতে আবীরকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ১৬ অগস্ট ইটাহার ব্লকের মারনাই এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসকের ঘরে অসুস্থ অবস্থায় এক মাসের আবীরকে ফেলে পালিয়ে যায় এক মহিলা। ওই হাতুড়ে চিকিৎসক শিশুটিকে শিশুকল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেন। কমিটির তরফে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই থেকে আবীর হাসপাতালের বাসিন্দা। এ দিন সকালে নার্স ও আয়ারা আবীরকে হলুদ মাখিয়ে স্নান করানোর পরে টাউন ক্লাব রোড এলাকার কালী মন্দিরে নিয়ে যান। সেখানে পুজো দেওয়ার পরে শিশুর মুখে পায়েস তুলে দেওয়া হয়। এদিন আবীরকে নতুন ধুতি, পাঞ্জাবি পড়ানো হয়। মাথায় দেওয়া হয় মুকুট। চিকিৎসক অসিতবাবু কাসার থালা, বাটি, গ্লাস ও চামচের ব্যবস্থা করেন। অন্য চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা উপহার দেন দুধ, দোলনা সহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী। সেগুলি শিশু বিভাগে রাখা হয়। নিলাঞ্জনবাবু বলেন, “আবীরকে আমরা অনাথ মনে করি না। ওর মুখেভাত দেওয়া আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।” |