শিলিগুড়ি পুরসভা |
নান্টুকে নিয়ে কংগ্রেস-বামেদের চাপে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নান্টু পালকে ফের শিলিগুড়ির পুরসভার চেয়ারম্যান ‘নির্বাচন’ করে কংগ্রেস এবং বামেদের প্রবল চাপের মুখে পড়ল তৃণমূল। বামেরা নান্টুবাবুর ‘নির্বাচন’কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। নান্টুবাবুকে ‘অনৈতিক ভাবে’ চেয়ারম্যান করা হয়েছে অভিযোগে মেয়র কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্তও তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র সহ সব মেয়র পারিষদকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। সেপ্টেম্বর থেকে নান্টুবাবুকে নিয়ে চাপানউতোরের জেরে পুর পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছিল। এ বার এই পরিস্থিতিতে কার্যত পুরসভা ‘অচল’ হওয়ার আশঙ্কাই তৈরি হল।
১৪ ফেব্রুয়ারি অনাস্থায় হেরে শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসৃত হন তৃণমূলের নান্টু পাল। বুধবার ফের কাউন্সিলরদের একটি সভায় তৃণমূলের ১৫ জন কাউন্সিলর নান্টুবাবুকে চেয়ারম্যান ‘নির্বাচিত’ করেন। ওই সভায় কংগ্রেসের ১৪ জন এবং সিপিএমের ১৭ জন কাউন্সিলরের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
সে কারণেই ৪৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ১৫ জন উপস্থিত থাকায় এই সভায় ‘কোরাম’ হয়নি বলে দাবি করেছে সিপিএম। এই পুরসভার মেয়র কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্তও বলেন, “নান্টুবাবুকে অনৈতিক ভাবে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সে কারণে এ দিন ডেপুটি মেয়র সহ সমস্ত মেয়র পারিষদকে অপসারণ করা হয়েছে।” তাঁর এই সিদ্ধান্তে ডেপুটি মেয়র-সহ ৫টি মেয়র পারিষদ পদ হাতছাড়া হল তৃণমূলের। |
|
নান্টু পালকে অভিনন্দন গৌতম দেবের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এখন উত্তরবঙ্গে। এর মধ্যেই কংগ্রেস ও বামেদের দ্বিমুখী চাপের মুখে পড়ে বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলের পুরসভার পরিষদীয় দলনেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
এ দিন রাতে মালবাজারে মুকুলবাবু দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা স্পষ্ট জানাতে পারেনি তৃণমূল। মুকুলবাবু বলেছেন, “জোটের পুরবোর্ড বলে মেয়র সব মেয়র পারিষদকে সরিয়ে দিতে পারেন না। তাঁর আলোচনা করা উচিত ছিল।”
গত ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন নান্টুবাবু। সেই থেকেই কংগ্রেস এবং বামেরা আলাদা ভাবেই তৃণমূলের উপরে চাপ তৈরি করে। অনাস্থায় হেরে নান্টুবাবু অপসৃত না-হওয়া পর্যন্ত বামেরা বোর্ড মিটিংয়েও যোগ দেননি। নান্টুবাবু অপসৃত হলে নয়া চেয়ারম্যান পদের জন্য তৃণমূলের হয়ে নান্টুবাবু ফের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এ দিন বেলা ১টায় পুরভবনে নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের ১৫ জন কাউন্সিলর হাজির হন। তার আগে সকালেই একাধিক সংবাদপত্রে নান্টুবাবুকে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করে সরকারি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে দেখে কংগ্রেস ও বামেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বামেরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভোটে অংশ নেননি।
কংগ্রেসও অনুপস্থিত থাকে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ১৫ কাউন্সিলরই ভোট দেন। নান্টুবাবুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে শপথ গ্রহণ করান শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক তপন বর্মণ। তবে এই সভায় ‘কোরাম’ হয়নি বলে বামেদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বৈঠকের প্রিসাইডিং অফিসার অরিন্দম মিত্র জানান, নিয়ম মেনেই নির্বাচন হয়েছে। রাজ্যকে বিস্তারিত জানিয়ে দেবেন তিনি। নান্টুবাবুও দাবি করেছেন, “নিয়ম মেনেই চেয়ারম্যান হয়েছি। এর বেশি বলতে চাই না।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “বেআইনি ও অসাংবিধানিক কাজ হয়েছে। আমরা আইনের পথেই যাচ্ছি।” |
|