|
|
|
|
মমতার সাহায্যও নিতে দিলেন না গুরুঙ্গ |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি
অনির্বাণ রায় • লাটাগুড়ি |
তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জেরে এ বার ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে।
উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বুধবার ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই দার্জিলিংয়ের চকবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, তাতে মোর্চা নেতাদের একাংশ রাজি হলেও বাদ সাধেন খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর হুমকির মুখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সাহায্য নিতে আসেননি ক্ষতিগ্রস্তদের কেউই।
এখানেই শেষ নয়। মোর্চা সভাপতির রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় জেলা পুলিশ আয়োজিত তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় সফল প্রতিযোগীদের অনেকেই পুরস্কার নিতে হাজির হননি। কালিম্পঙের সফল প্রতিযোগীরা এলেও দার্জিলিঙের প্রায় কেউই আসেননি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ এলাকায় আসার পরে মঙ্গলবার তাঁকে স্বাগত জানাতে যেতে চেয়েছিলেন মোর্চার প্রথম সারির কয়েক জন নেতা। অভিযোগ, সে ক্ষেত্রেও বাদ সেধেছিলেন গুরুঙ্গই। এ দিন লাটাগুড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শান্তি বজায় রাখলে আমি সব রকম সাহায্য করব। কিন্তু, অশান্তির চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না। মনে রাখতে হবে এই সরকার কিন্তু ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’।” সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এই কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (কেএলও) বার্তা দিতে চেয়েছেন। কারণ, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় এই গোষ্ঠী ফের অশান্তি তৈরি করতে চাইছে বলে পুলিশ মহলের খবর। |
|
লাটাগুড়ির টিয়াবনে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: সন্দীপ পাল |
কিন্তু ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ শব্দবন্ধটির সঙ্গে মোর্চা-তৃণমূল সম্পর্কের গভীর যোগ রয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙের ম্যালের সভায় গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান উঠলে ধমক দিয়ে তা থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি কিন্তু রাফ অ্যান্ড টাফ।” তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন গুরুঙ্গ। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ ওই মন্তব্য। অনেকের মতে, ওই শব্দবন্ধটি ফের সচেতন ভাবে ব্যবহার করে মোর্চাকেই সতর্কবার্তা দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁরা বলছেন, মোর্চা কী ভাবে পাহাড়ে এক দলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে, সে খবর নানা সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। অন্য কোনও রাজনৈতিক দল কর্মসূচি নিলেই মোর্চা কী ভাবে হামলা চালায়, সেই ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। ক’দিন আগে তৃণমূলের ৩ নেতাকে কালিম্পঙে পিটিয়ে মারা চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসনের অন্দরের খবর, বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় নিয়ে তাঁর সরকারের কঠিন ও কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সব খবরই আমাকে রাখতে হয়। মনে রাখবেন, কেউ যদি ভাবে শুধু আমি একা করে খাব। সেটা আমার সরকার হতে দেবে না।” এ দিন প্রহৃত নেতাদের দেখতে মুকুল রায়কে হাসপাতালেও পাঠান তিনি।
মোর্চা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে মোর্চা কাউকে নিষেধ করেনি বলে দাবি করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। কিন্তু সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “সব সময় পাহাড়ের মানুষের পাশে আছি। তাই ওঁরা কোথাও হাত পাততে যান না। কাউকে নিষেধ করার ব্যাপার নেই।”
মুখ্যমন্ত্রী যে মংপং বাংলোয় রয়েছেন, তার লাগোয়া রাস্তা দিয়েই এ দিন সন্ধ্যায় কুমানি পাহাড়ে যান তিনি। সেই সময়ে মালবাজারের কাছে সাংবাদিকদের গুরুঙ্গ বলেন, “আমার বেশি কিছু বলার নেই। তরাই-ডুয়ার্সের মানুষকে নিয়ে আমরা যে আন্দোলন করছি তা আরও জোরদার করব।” মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে আসা সত্ত্বেও মোর্চা নেতারা কেন তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন না? রোশনের বক্তব্য, “ব্যস্ত ছিলাম।”
এ দিন লাটাগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী পড়ুয়াদের সাইকেল, ভূমিহীনদের পাট্টা বিলি করেন। তিনি বলেন, “হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, পাহাড়কে শান্ত রাখুন। কেউ উস্কানি দেবেন না। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে পাহাড়ের উন্নয়নে গতি এসেছে। সেখানে ভয়ের পরিবেশ, অশান্তি তৈরির চেষ্টা করবেন না।” |
|
|
|
|
|
|