মুখ্যমন্ত্রী এখনও বিধানসভায় কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি। বিরোধীরা তাই নিয়ে সরব। অন্য দফতরের মন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্ন বাতিল নিয়েও এ বার প্রশ্ন তুলল বিরোধী শিবির। অভিযোগ উল্লেখ-পর্বে বাধা দেওয়া নিয়েও। সার্বিক ভাবে তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ বিরোধীদের।
আইনমন্ত্রীর কাছে কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর লিখিত প্রশ্ন ছিল, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (অনিন্দ্য মিত্র) কি বিশেষ কারণে পদত্যাগ করেছেন? যদি করেন, তা হলে কারণটি কী? মনোজবাবুকে স্পিকারের দফতর থেকে জানানো হয়, ওই প্রশ্ন খারিজ করা হয়েছে। কংগ্রেসেরই আর এক বিধায়ক আবু তাহের মুর্শিদাবাদে ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতিকে সরকারি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রশ্নেরও একই পরিণতি হয়েছে। এ দিনই বামেরা উল্লেখ-পর্বে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে সরকারি কৌঁসুলি বদলের প্রসঙ্গ তুলতে চেয়েছিলেন। বিচারাধীন বিষয় বলে তাঁদের দাবিও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভায় কেন তাঁদের অধিকার এ ভাবে খর্ব করা হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব।
মনোজবাবু বলেন, “আইনসভার সদস্য হিসাবে আমি যে প্রশ্ন করি, জনপ্রতিনিধি ও রাজ্যের মানুষের তা জানার অধিকার আছে। সরকারের দায়িত্ব বিধানসভাকে এটা জানানো। কিন্তু বিধানসভায় আমাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে শাসক দল!” তাঁর সতীর্থ তাহেরের বক্তব্য, “ওই দুগ্ধ সমবায়ই মুর্শিদাবাদের এক মাত্র শিল্প। ৭০ হাজার মানুষ জড়িত। ডেপুটি স্পিকারের কাছে তাই জানতে চেয়েছিলাম, কেন এ নিয়ে প্রশ্ন বাতিল করা হল?” প্রসঙ্গত, মনোজবাবু ও তাহের দু’জনেই মুর্শিদাবাদের বিধায়ক। ওই জেলার বেলডাঙার ভাবদায় একটি প্রস্তাবিত কলেজ গড়ার অগ্রগতি বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তাহেরের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওই ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আছে। তাহেরের অভিযোগ, সম্প্রতি বিধানসভা উপনির্বাচনে মুর্শিদাবাদের মানুষ বিপুল সংখ্যায় সরকার-বিরোধী ভোট দেওয়ায় ওই জেলার সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে সরকার!
কংগ্রেস বিধায়কদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “অসত্য অভিযোগ! পরিষদীয় রীতি-নীতি না-জানার জন্যেই ওঁরা এই অভিযোগ করেছেন।’’ পরিষদীয় রীতি বোঝাতে গিয়ে শোভনদেববাবু বলেন, “প্রশ্ন জমা পড়ার পরে ক্রম তালিকায় সাজানো হয়। সেই তালিকা ভেঙে কারও প্রশ্ন দেওয়া বা না-দেওয়া সম্ভব নয়।” গার্ডেনরিচ-কাণ্ড নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা ঠেকাতে সরকার পক্ষ যে যুক্তি দিচ্ছে, তার সমালোচনা করে সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “বিচারাধীন বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিচারাধীন হল মামলাটা। কৌঁসুলি বদল বিচারাধীন নয়।” সূর্যবাবু আরও বলেছেন, সরকারের এই মনোভাবের জন্যই তাঁরা গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। |