আদরের সেই স্পর্শই মাওবাদী অঞ্চলে চান জয়রাম
কিষেণজির মৃত্যুর পরে জঙ্গলমহলে প্রথম বার জনসভা করতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর দিন সংবাদপত্রে ছবি বেরোল, মমতা আদিবাসী শিশুকে আদর করছেন। কোনও কাগজে, চুমুও খাচ্ছেন তাদের। সিআরপিএফের তৎকালীন ডিজি কে বিজয় কুমার এসে জয়রাম রমেশকে বলেছিলেন, “স্যার, এই ছবিগুলিই জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি বদলে দেবে।”
তখন সংশয় থাকলেও এখন তা মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও জঙ্গলমহলে মাওবাদী সমস্যার সমাধানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করছেন তিনি। এমনকী মাওবাদী মোকাবিলায় যৌথ বাহিনীর অভিযান ও উন্নয়নের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার জঙ্গলমহল মডেলকেই গোটা দেশে অনুকরণ করার কথা বলছেন জয়রাম। তাঁর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলই আমাদের এগিয়ে চলার রাস্তা। কারণ জঙ্গলমহলই দেখিয়েছে, মাওবাদী সমস্যা নামের ধাঁধাটির সমাধান খুঁজতে গিয়ে আগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা ভাবা হয়নি।” জঙ্গলমহল নিয়ে রাজ্যের আমলা চন্দন সিনহার লেখা একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন রমেশ। সেখানেই তিনি বলেন, “কঠোর নিরাপত্তা অভিযান, সংবেদনশীল উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং তার সঙ্গে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এই তিনটি বিষয়েই অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে জঙ্গলমহলে।”
ঝাড়গ্রামে। গত জানুয়ারিতে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের মঞ্চে। —ফাইল চিত্র
চন্দন সিনহা এখন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সচিব। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৪ মাস জেলাশাসক হিসেবে থাকার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা বইয়ে জঙ্গলমহলে অশান্তির আগুন কতটা নিভেছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। লিখেছেন, “জঙ্গলের আগুন হয়তো সাময়িক ভাবে প্রশমিত হয়েছে। তবে সে আগুন ছাইচাপা।” রমেশ মানছেন, এই সংশয় থাকা স্বাভাবিক। তাঁর বক্তব্য, “আগুন পুরোপুরি নিভেছে কি না, তা এখনই বলার সময় আসেনি। কিন্তু ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়েও আমাদের জঙ্গলমহলের রণকৌশল নিতে হবে। ঝাড়খণ্ডের সারান্ডাতে তিনি নিজেও একই পথ নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন জয়রাম রমেশ। নিজে পাঁচ বার সারান্ডায় গিয়েছেন। একই ভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনাকে আরও সংবেদনশীল করতে বিভিন্ন গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পেও পরিবর্তন করা হচ্ছে। যোজনা কমিশনের সদস্য মিহির শাহ বলেন, “অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল বা বিআরজিএফে এত দিন জেলা-ভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বার জেলার মধ্যে পৃথক এলাকা ধরে ধরে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ হবে।”
রমেশের যুক্তি হল, বঞ্চনার ক্ষোভ রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে। প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের অভাবটাও প্রকট। কিন্তু এই দুইয়ের পাশাপাশি মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার আর একটি পরিচিত ছবি হল, রাজনৈতিক দলগুলি সেখানে নিজেদের কাজকর্ম বন্ধ করে রেখেছে। সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এন সি সাক্সেনা অবশ্য এর পিছনে যুক্তি দিয়েছেন, “আদিবাসীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিছিলের পথে হাঁটেনি। সরাসরি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে।” কিন্তু রমেশের বক্তব্য, ঠিক সেই কারণেই কংগ্রেস, বিজেপি-র মতো জাতীয় দলগুলির পাশাপাশি আঞ্চলিক পার্টিগুলিকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে এই সব এলাকায়। আদিবাসীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রদর্শনের রাস্তায় নিয়ে আসতে হবে। যেমনটা হয়েছে জঙ্গলমহলে। শুধু শাসক দল তৃণমূল নয়, অন্য দলগুলিও এখন জঙ্গলমহলে গিয়ে জনসভা করছে।
তবে এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অবশ্য রাজনৈতিক স্থায়িত্বের কোনও প্রশ্ন নেই বলেই মনে করেন জয়রাম রমেশ। চন্দন সিনহার বইয়ে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অনুন্নয়নে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতার ছবি উঠে এসেছে। চন্দন তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখেছেন, প্রশাসন ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থার গলদের ফাঁকেই মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে ঢুকে পড়েছিল। প্রশাসনের কর্তারা কেউই প্রত্যন্ত এলাকায় যান না।
ধরে নেওয়া হয়, টাকা খরচ হচ্ছে মানেই উন্নয়ন হচ্ছে। উল্টো দিকে ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে মাওবাদীরা নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে বলেও গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন।
রমেশের পাল্টা প্রশ্ন, ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ়ে তো দীর্ঘদিন একই সরকার রয়েছে। সেখানে সমস্যা মিটছে না কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, “আসলে নোয়াপাড়া বা মালকানগিরি নিয়ে ভুবনেশ্বর চিন্তিত নয়। কারণ ওই জায়গাগুলো ভুবনেশ্বর থেকে অনেক দূরে। বরং ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুরের কাছে।” আবার ওই ছত্তীসগঢ়েই দক্ষিণ গঢ়ছিরৌলির আবুঝমাঢ়ে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে রয়েছে। জঙ্গলমহলের সাফল্য এ বার আবুঝমাঢ়েও ফলাতে চান জয়রাম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.