আসল সংখ্যাটা কত! কেউ কি তা জানে?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বলেন আড়াই লাখ। কখনও ৬ লাখ। তাঁর সরকার আসার পরে ১০ লাখ কমর্সংস্থান হয়েছে, এমন দাবিও করেছেন তিনি। সদ্য রাজ্য বাজেটে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও জানিয়েছেন ১০ লাখ কর্মসংস্থানের কথা। কিন্তু বিধানসভাতেই এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী যে হিসেব দিয়েছেন, তাতে রাজ্যে কর্মসংস্থানের চিত্রটা কিন্তু বেশ করুণ। আরও করুণ নয়া জমানায় চাকরি পাওয়া সংখ্যালঘুর সংখ্যাটা। ফলে কোথায় কী ভাবে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হল, তার ব্যাখ্যা চাইছেন বিরোধীরা।
প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপালের (চাচা) এক প্রশ্নের জবাবে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু যে লিখিত উত্তর দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১২-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মনিয়োগ সংস্থা তথা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে ৭০ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬২৪ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১,৮৯৯ জন চাকরি পেয়েছেন গত বছর। সাধারণ ভাবে নিচু তলার চাকরিই কর্মনিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে হয়। তবু পূর্ণেন্দুবাবুর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরেই বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম প্রশ্ন তুলেছে, এই হারে চাকরি পেলে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থানের হিসেব আসে কোথা থেকে?
শ্রমমন্ত্রীর বক্তব্য, কর্মনিয়োগ সংস্থায় বৈধ নাম কত, তা খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় নিজের ঘরে বসে এ দিন পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, যাঁদের নাম এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত রয়েছে, তাঁদের অনেকেই হয় চাকরি পেয়ে গিয়েছেন, নয়তো বয়স ৪৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও প্রতি বছর এক্সচেঞ্জের কার্ড যে নবীকরণ করাতে হয়, বহু যুবক-যুবতী তা করেন না বলেই তাঁর ধারণা। মন্ত্রীর তাই ধারণা, এক্সচেঞ্জে বৈধ নাম অনেক কম।
চাচার প্রশ্নের জবাবে শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছর চাকরি পাওয়া ১,৮৯৯ জনের মধ্যে মুসলিম ১০২ জন, খ্রিস্টান ১ জন। বৌদ্ধ ও শিখদের এক জনও চাকরি পাননি। এই তথ্য নিয়েই উল্লেখ-পর্বে হইচই জুড়ে দেন কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই হারে বছরে চাকরি পেলে বাকিরা কোথায় যাবেন?” রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩০% সংখ্যালঘু। মানুসবাবুর দাবি, সেই অনুপাতে ১,৮৯৯ জনের মধ্যে ৫৫০ জনের বেশি সংখ্যালঘুর চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই যদি চিত্র হয়, তা হলে ৩০%-কে চাকরি দিতে কত বছর লাগবে?”
বিষয়টি নিয়ে সরব বামেরাও। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মিডিয়া সেন্টারে বলেন, “শ্রমমন্ত্রীর জবাবে এই তথ্য লেখা আছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীও বিধানসভায় যা বলেছেন, তাতে নতুন কিছু হয়েছে বলে তো বুঝতে পারলাম না! সবই আগে ছিল। এ তো ঋণাত্মক বৃদ্ধি (নেগেটিভ গ্রোথ) হয়ে যাচ্ছে! কোথা থেকে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হল, বোঝা যাচ্ছে না!”
মানসবাবুর বক্তব্য শুনে শ্রমমন্ত্রী অবশ্য পরে মন্তব্য করেন, “কংগ্রেস নোংরা রাজনীতি করছে! এর আগে কত জন চাকরি পেয়েছিলেন, সেই হিসেবও আমরা বার করছি। এই কারণেই এক্সচেঞ্জের হিসেব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তা ছাড়া, এখন যাঁরা শিল্প-স্থাপন করছেন, তাঁরা কর্মী নিয়োগের জন্য আর এক্সচেঞ্জের দ্বারস্থ হয় না। তাই আমরা সমান্তরাল এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক গড়ে তুলেছি।” এই ব্যাঙ্কে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার যুবক-যুবতী নাম লিখিয়েছেন বলে শ্রমমন্ত্রী এ দিন জানান। যদিও সেখানে নাম নথিভুক্ত করা ৩০০ জন চাকরি পেয়েছেন গত ৬ মাসে।
শ্রমমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে মানসবাবুর বক্তব্য, “প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেসের সব চেয়ে প্রবীণ বিধায়ক। এটা নোংরা রাজনীতি! প্রথম বিধায়ক হয়ে আসা পূর্ণেন্দুবাবুর তো ওঁর কাছে এসে রাজনীতির প্রথম পাঠ নেওয়া উচিত। সরকারি তথ্যে যা ধরা পড়েছে, সেটা আমরা বলতে পারব না!”
উল্লেখ-পর্বে এ দিনই তেহট্টের সিপিএম বিধায়ক রঞ্জিৎ মণ্ডল অভিযোগ করেন, গত ১১ মার্চ তেহট্ট থানা থেকে মাইক নিয়ে প্রচার করে বলা হয়েছে সিভিক পুলিশে লোক নেওয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন। যা নিয়ে সূর্যবাবু পরে বলেন, “লোক নেওয়ার সরকারি ঘোষণা নেই, বিজ্ঞাপন নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হবে যে কোনও দিন। উচ্চ মাধ্যমিক চলছে। তার মধ্যে পুলিশ মাইক নিয়ে লোক নেওয়ার কথা বলছে, এ-ও এক অভিনব ঘটনা!” |