কোথায় মাসে ১০ হাজার!
আর কোথায় দু’দিনে ১৫ হাজার!
এই ফারাক দেখা যাচ্ছে বেকারদের নাম তোলার তাগিদে। আগে মাসে টেনেটুনে ১০ হাজার নামও নথিভুক্ত হত না ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ বা কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কে। কিন্তু গত দু’দিনে ওই ব্যাঙ্কে ১৫ হাজারেরও বেশি নাম নথিভুক্ত হয়েছে। নাম তোলার এই হুড়োহুড়িতে মাঝেমধ্যেই কম্পিউটারের সার্ভার যাচ্ছে বিগড়ে।
কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কে নাম তোলার জন্য এই ভিড় কেন?
রাজ্যের শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ভাতা পাওয়ার আশাতেই বেকার-স্রোতে এই উজান। এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নথিভুক্তদের মধ্যে থেকে এক লক্ষ বেকারকে মাসে দেড় হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা এ বারের বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সরকারি ভাবে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘যুব উৎসাহ প্রকল্প’। এই প্রকল্প ঘোষণার পরেই নাম তোলার উৎসাহের প্রবল ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে শ্রম দফতরকে।
শ্রম দফতরের হিসেব, গত বছর জুলাইয়ে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক চালু করার পর থেকে সোমবার বাজেট পেশের আগে পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত নামের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৫ হাজার। বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ভাতা দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.employmentbankwb.gov.in)-এ নতুন নাম তোলার হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে বলে ওই দফতর সূত্রের খবর।
শ্রম দফতরের কর্তারা জানান, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই প্রথম এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক চালু করেছে। তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়েই এই প্রকল্প বলে জানান শ্রম দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা প্রদীপ রায়চৌধুরী। এতে নতুন করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে সব কর্মপ্রার্থীকে। আগেকার কর্মসংস্থান কেন্দ্রে এক্সচেঞ্জে যাঁরা নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, যুব উৎসাহ প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে তাঁদেরও এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা ৭১ লক্ষ। শ্রম দফতরের এক কর্তা জানান, এর একটি বড় অংশই ভাতা পেতে আগ্রহী হবেন। সে-ক্ষেত্রে আগামী দিনে কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কে লক্ষ লক্ষ বেকার নাম নথিভুক্ত করতে আসবেন। এই চাপ কী ভাবে সামলানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন শ্রম দফতরের কর্তারা।
কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করতে হবে কী ভাবে?
শ্রম দফতর সূত্রে খবর, যে-কোনও ইন্টারনেট-যুক্ত কম্পিউটারে কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে নাম, ঠিকানা, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা নথিভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরে সাময়িক নথিভুক্তি নম্বর পাওয়া যাবে। তার পরে ৩০ দিনের মধ্যে যে-কোনও কর্মসংস্থান কেন্দ্রে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীকে তাঁর যোগ্যতার আসল প্রমাণপত্র দেখাতে হবে এমপ্লয়মেন্ট অফিসারকে। তিনি সব কিছু মিলিয়ে দেখে একটি ‘পাসওয়ার্ড’ দেবেন। প্রার্থী পরে সেই ‘পাসওয়ার্ড’ পরিবর্তন করে নিজের নাম পাকাপাকি ভাবে নথিভুক্ত করতে পারবেন।
রাজ্যে কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নথিভুক্ত প্রায় ৭১ লক্ষ বেকারও কি এই ভাতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন?
প্রদীপবাবু জানান, কী ভাবে বা কোন মাপকাঠিতে কর্মসংস্থান ব্যাঙ্ক থেকে ভাতা দেওয়া হবে, সেই ব্যাপারে এখনও কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। শ্রম দফতরের এক কর্তা জানান, কর্মসংস্থান কেন্দ্রে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নাম নথিভুক্ত করেও চাকরি পাননি, ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কি না, তা-ও এখনও ঠিক হয়নি। |