গাছতলায় শিশু, পিঁড়িতে কার্তিক সামলেই পরীক্ষা
কেউ মা, কেউ বৌমা।
পরীক্ষা দিতে বসেও এক জনের মন পড়ে স্কুলচত্বরে গাছতলায়। কান্নার আওয়াজ এলেই ছুটতে হচ্ছে। আর এক জন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়েই সোজা হাজির বিয়ের পিঁড়িতে। বুধবার এমনই দুই দৃশ্যের সাক্ষী রইল উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিনটি।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ক্ষুদিরামপল্লি স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছেন গোয়ালপোখর পাঞ্জিপাড়া স্কুলের ছাত্রী আসমা বেগম। মাসখানেক হল তাঁর মেয়ে হয়েছে। সে এখনও মায়ের দুধ খায়। অগত্যা মেয়েকে নিয়েই পরীক্ষা দিতে এসেছেন আসমা। গাছতলায় তাকে নিয়ে বসে আছেন বাড়ির লোকজন। মেয়ে কাঁদলেই ছুটে এসে খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষার্থী মা। সময় নষ্ট হচ্ছে যে? “কী আর করব? এ ভাবেই পুরো পরীক্ষা দেব। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই আমি” বলে যান আসমা।
উচ্চ মাধ্যমিকে বসেই বিয়ের পিঁড়িতে। দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।
তবে তিনি একা নন। ওই স্কুলেই বছরখানেকের মেয়েকে বাইরে রেখে পরীক্ষা দিচ্ছেন ইসলামপুর ভদ্রকালী হাইস্কুলের ছাত্রী, পাটাগাড়ার গুলবানু বেগম। গত বছর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার দিনে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সদ্যোজাতকে নিয়ে হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেন তিনি।
এই অবস্থায় দু’টি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে না পেরে এ বার ফের বসেছেন। পরীক্ষা শেষে তাঁকে দেখেই এক গাল হেসে দিল মেয়ে আকলিমা। আত্মীয়েরা জানালেন, সন্তান সামলেও শেষ কয়েক দিন রাত জেগে পড়েছেন গুলবানু। তাঁর সাধ, “কলেজে পড়ে চাকরি করতে চাই।”
রাজনগরের কুণ্ডিরা গ্রামের ছবি দাস অবশ্য এখন সংসার পাততে ব্যস্ত। বুধবারই ছাদনাতলায় তাঁর চোখ খুঁজে নিয়েছে খয়রাশোলের কার্তিক দাস বৈষ্ণবের তৃষিত নয়ন। তার পরে শ্বশুরবাড়ি। পরের পরীক্ষাগুলো দিতে আসবেন সেখান থেকেই।
ইসলামপুরে গুলবানু। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু আগেও নয় পরেও নয়, একেবারে পরীক্ষার মধ্যেই বিয়ে করতে হল? বীরভূমের রাজনগর ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছবির আত্মীয়েরা জানান, তাঁদের পরিবার বিশেষ সচ্ছল নয়। তাই বরপক্ষ মেয়ে পছন্দ করে দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলায় তাঁরা আর নড়চড় করতে চাননি। ছবির বাবা সুদীপ দাস বলেন, “প্রথমে ঠিক হয়েছিল, মেয়ে এ বার পরীক্ষা দেবে না। বিয়েটাই হয়ে যাক। কিন্তু দিন কয়েক আগে ও পরীক্ষা দিতে চাইল। তখন এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।”
ছবির শ্বশুর নরহরি দাস বৈষ্ণব অবশ্য বলেন, “বৌমা পরীক্ষা দেবে জানলে বিয়েটা বৈশাখ মাসেও হতে পারত।” বর কার্তিকের কথায়, “গাড়ি চালানো আমার পেশা। আমাদের পরিবারে উচ্চশিক্ষার বিশেষ চল নেই। তবে ছবি যখন বলল পরীক্ষা দেবে, আমি না করিনি। দেখব, যাতে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষাটা দিতে পারে।” কিন্তু নানা অনুষ্ঠানের মাঝে সেটা কি সম্ভব? কার্তিক গুনগুন করেন, “একটু তো সমস্যা হবেই। দেখি...।”
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ক্ষুদিরামপল্লি স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছেন গোয়ালপোখর
পাঞ্জিপাড়া স্কুলের ছাত্রী আসমা বেগম। মাসখানেক হল তাঁর মেয়ে হয়েছে। সে এখনও
মায়ের দুধ খায়। বুধবার মেয়েকে নিয়েই পরীক্ষা দিতে আসেন আসমা। ছবি: অভিজিৎ পাল।
ছবি অবশ্য বিশেষ চিন্তায় নেই। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা মন্দ হয়নি জানিয়েই বক্রেশ্বর ধামে শিবমন্দিরে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন তিনি। দুলে উঠল মালা। সদ্য খাতা-কলম ছেড়ে আসা দু’টি হাতকেই স্টিয়ারিং মেনে আঁকড়ে ধরলেন কার্তিক।
ফাগুনের শেষ বিয়ের তিথি। কম করে শ’খানেক বিয়ে ছিল বক্রেশ্বরে। শাঁখ বাজল। কোকিল ডেকে উঠল।
সাক্ষী রইল একশো জোড়া চোখ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.