উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বিভ্রাটের আঁচ লাগল বিধানসভাতেও।
বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ বার ৭ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে হাজারখানেক পরীক্ষার্থী সোমবার রাত পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ড পাননি। কারণ, এঁরা কেউই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণ করেননি বলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে জানানো হয়েছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী এঁদের পরীক্ষায় বসতে পারার কথাই নয়। কিন্তু সংসদ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় সংসদ কর্তৃপক্ষকে। পরীক্ষার আগের দিন আবেদনপত্র পূরণ করিয়ে অ্যাডমিট কার্ড তুলে দিতে অনেক সময় লাগে। মঙ্গলবার মাঝরাত পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চলে।
বুধবার বিধানসভার শুরুতেই এই নিয়ে হইচই শুরু দেন বিরোধীরা। আবেদনপত্র পূরণ না-করা পড়ুয়াদের কী কারণে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হল এবং তা-ও পরীক্ষার আগের রাতে, তা জানতে চান তাঁরা। কার্যত বেনজির এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তখন সভায় অনুপস্থিত। বিরোধীদের দাবি মেনে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ডেকে পাঠান। বিধানসভায় হাজির হয়ে মৌখিক বিবৃতি দেন শিক্ষামন্ত্রী। তখন সভা পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ।
ব্রাত্যবাবু বলেন এই ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র পূরণ করেননি। ফলে এক অর্থে তাঁরা বৈধ পরীক্ষার্থী নন। এর জন্য যেমন কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরাই দায়ী আবার কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুল দায়ী বলেও আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এই পরীক্ষার্থীদের সবাই টেস্টে পাশ করেছেন। সে দিক থেকে তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকে বসার দাবিদার। এই দুয়ের মাঝে পড়ে যাই আমরা। সোমবার সন্ধ্যার পরে আমার কানে আসে এই পরীক্ষার্থীরা ভেঙে পড়েছেন এবং কান্নাকাটি করছেন।
এমতাবস্থায় শেষ মুহূর্তে অ্যাডমিট কার্ড দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ খোদ মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন কি না, সে ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় কিছু বলেননি। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, সোমবার রাতেই ঠিক হয়, কলকাতায় সংসদের প্রধান দফতর ছাড়াও তিনটি আঞ্চলিক অফিসে (উত্তরবঙ্গ, মেদিনীপুর ও বর্ধমান) মঙ্গলবার ওই ছাত্রছাত্রীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে। কলকাতায় সরাসরি অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে যাবেন পরীক্ষার্থীরা। আর আঞ্চলিক অফিসে ই-মেল মারফত তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার প্রিন্ট-আউট নিয়ে পরীক্ষায় বসা যাবে। কিন্তু এর পরেও প্রায় ৪৫ জন অ্যাডমিট কার্ড পাননি। তাঁরাও যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়, কেবল রেজিস্ট্রেশন নম্বর নথিভুক্ত করে ওই পরীক্ষার্থীদের যেন পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়। সংসদ অবশ্য দাবি করেছে, রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখেই এই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীর বিবৃতিতে সন্তুষ্ট হননি বিরোধীরা। তাঁরা লিখিত বিবৃতির দাবি তোলেন। সভাকক্ষের বাইরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “কতকগুলো জিনিস অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে। এতগুলো ছেলেমেয়ে ফর্ম পূরণ না করলেও তাদের অ্যাডমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? কেনই বা এত দেরিতে সিদ্ধান্ত? কার চাপে এটা করতে হল?” তাঁর অভিযোগ, সংসদ যদি স্বশাসিত সংস্থা হয়ে থাকে, তা হলে মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন কী করে? সূর্যকান্তর কথায়, “বলা হয় সংসদ স্বশাসিত সংস্থা। অথচ প্রথমে শোনা গেল শিক্ষামন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। পরে খবর বেরলো মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা-ও আবার পরীক্ষা শুরুর আগে মধ্যরাতে!”
অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এ বছর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ৯ জানুয়ারির পরে কোনও পরীক্ষার্থীকে আবেদনপত্র পূরণ করতে দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সংসদ শেষ লগ্নে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ফলেই যাবতীয় বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত বলে মনে করছেন পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত অনেকে। যদিও সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যারা সময়ে আবেদনপত্র পূরণ করেনি, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে তাদের একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সংসদের কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য অ্যাডমিট কার্ড দিতে সময় লেগেছে। এর কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আগের বার অসফল যে পরীক্ষার্থীরা একটি বা দু’টি পত্রে পরীক্ষা দেবেন, তাঁরা ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে সংসদের কাছ থেকে অ্যাডমিট কার্ড পেতে পারবেন বলে সভাপতি জানান।
গোটা ঘটনাটি সম্পর্কে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “বারবার বলা হয়, ৩৪ বছর, ৩৪ বছর! এই রকম কি ৩৪ বছরে দেখা গিয়েছে? শিক্ষামন্ত্রীর মনে হয়েছে, এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত! আর সেটা নিয়েছেন মধ্যরাতে! আমরা বলেছি, ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে শিক্ষামন্ত্রী লিখিত বিবৃতি দিন!” |