দু’পক্ষই বলছে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটবে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকার আর নির্বাচনের কমিশনের বিরোধ মেটার কোনও ইঙ্গিত এখনও দৃশ্যমান নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দাবি, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করাই হয়নি।
কমিশন সূত্রের খবর, রীতি অনুযায়ী চললে রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব নিজে গিয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় বসে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতেন। কিন্তু এই ক’দিনে বিরোধ ধাপে ধাপে বেড়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে চিঠি দেওয়া-নেওয়া হয়েছে তবু পঞ্চায়েত সচিব এক দিনের জন্যও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আলোচনায় বসেননি। ফলে ভোটের দিন ঠিক করা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে কমিশনের দাবি। যদিও সরকার তা মানছে না। বুধবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আশা করি উভয়েই দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে।”
আইন অনুযায়ী, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার অধিকার রাজ্য সরকারেরই। তবে তা হতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে। এবং দু’পক্ষ সহমত না হলে কমিশন বারবার রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দিতে পারে। এ দিন মহাকরণে পঞ্চায়েতমন্ত্রীও স্বীকার করেন, “আইনমাফিক সহমতে আসতেই হবে।” কিন্তু সহমতে আসতে গেলে রাজ্য সরকারের যা করণীয়, সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু করা হয়নি বলে দাবি কমিশনের। |
রাজ্য সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আশা করি উভয়েই দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে।
এম কে নারায়ণন, রাজ্যপাল |
|
নির্বাচন কমিশনের একাধিক প্রাক্তন কর্তার মতে, প্রথম থেকেই পঞ্চায়েত সচিব যদি পুরো বিষয়টি নিয়ে কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন, বিরোধ এই পর্যায়ে পৌঁছত না। রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, ডিসেম্বর মাসে কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন সংক্রান্ত অন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। কিন্তু সেখানে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কোনও কথা হয়নি। যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সমর ঘোষ মুখ্যসচিব থাকাকালীন পঞ্চায়েত সচিবকে সঙ্গে নিয়ে দু’বার কমিশনে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত সচিব একাও এক বার গিয়েছেন। অতএব অভিযোগটা ঠিক নয়।”
সরকার ও কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্য কবে পঞ্চায়েত ভোট করতে চায় জানতে চেয়ে গত বছরের এপ্রিল মাসে কমিশন প্রথম চিঠি দিয়েছিল। সরকারের তরফে কোনও উত্তর না পেয়ে মে এবং জুন মাসে কমিশন আরও দু’টি চিঠি দেয়। কিন্তু জুলাই মাস অবধি তারও কোনও উত্তর রাজ্য সরকার দেয়নি। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ধারিত সময়ের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন করে ফেলার কথা ঘোষণা করতেই সরকার নড়েচড়ে বসে। কমিশনকে তড়িঘড়ি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে পঞ্চায়েত ভোট করতে চায় সরকার। কিন্তু কমিশন জানিয়ে দেয়, নির্বাচন করার আগে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ করতে হবে। সেই কাজ করতে অন্তত ছ’মাস সময় লাগবে। ফলে নভেম্বরে ভোট করা সম্ভব নয়। এর পরে সরকার ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করে দেওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য কমিশন।
কমিশন এখন চাইছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তিন দফায় নির্বাচন হোক। কিন্তু রাজ্য সরকার এক বার বলেছে দু’দফায়, আর এক বার বলেছে এক দিনে নির্বাচন করতে হবে। এর পর থেকে সরকার ও কমিশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছেই। কিন্তু অচলাবস্থা কাটেনি।
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও দু’পক্ষের মতবিরোধ রয়েছে। কমিশন চাইছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট করাতে। তাদের বক্তব্য, যদি বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে পারে, তা হলে সারা রাজ্যে নয় কেন? কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, “২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে এই তৃণমূল কংগ্রেসই রাজ্যে তিন দফায় ভোট করার পক্ষে সওয়াল করেছিল। বলা হয়েছিল, শুধু জঙ্গলমহলের জন্য এক দিন ভোট হোক। বাকি দু’দিন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে ভোট হোক। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করার দাবিও করেছিল তৃণমূল।” |