রাশি রাশি কথা। তার মধ্যে কিছু গান! বুধবার বিধানসভায় একটানা চার ঘণ্টা ধরে গুরুগম্ভীর আলোচনা চলে বাজেট নিয়ে। তার মধ্যে গানে গানে পরিস্থিতি অনেকটাই সহজ করে দেন কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক কেশবচন্দ্র রায়। তাঁর গানে রাজনৈতিক কটাক্ষ থাকলেও শাসক বা বিরোধী কোনও পক্ষের বিধায়কেরাই রসটুকু নিতে ভুল করেননি। ফলে হিসাবতত্ত্বের কচকচি এবং রাজনীতির মারপ্যাঁচের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত রসের রেশ থেকেই যায়।
|
কেশবচন্দ্র রায় |
সরকারকে কটাক্ষ করতেই গানকে অস্ত্র করতে চেয়েছিলেন কেশববাবু। শাসক দলের কথায়-কাজে মিল নেই। ভূরি ভূরি ফাঁকা প্রতিশ্রুতিই সার! এই অভিযোগ তুলে ধরতেই খোলা গলায় চটকা গান ধরেন তিনি।
‘নাক দাংরার ব্যাটারা, চোখ দাংরার নাতিটা
মোক ভুলালু ছতে খাড়ু দিয়া!’
অর্থাৎ এক গ্রামবধূ বলছেন, নাক-উঁচু শ্বশুরবাড়ি টাকার গুমোরের ফাঁকা আওয়াজেই আমায় ভোলাল! রাজবংশী ভাষায় গান শুনে হেসে খুন শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। সাউন্ড-বক্সে কান খাড়া করে গান শুনেছেন বিধানসভার কর্মী থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা। মুখ টিপে হাসতে দেখা যায় স্পিকারকেও। শাসক দলের কয়েক জন বিধায়ক ওই গানে এমনই মুগ্ধ যে, পারলে একটু নেচে নেন!
চটকা গানের সঙ্গে মুন্সিয়ানার সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতেরও মিশেল ঘটিয়েছেন কেশববাবু। স্কুলে ঢালাও শিক্ষক নিয়োগ কিংবা ব্লক-পিছু কৃষি-ভাণ্ডার গড়ে তোলার পুরনো প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘পুরানো সেই দিনের কথা, ভুলবি কি রে হায়...’। এত ক্ষণ অনেক বিধায়কই বসে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। চটকা গান শুনে তাঁদেরও যেন চটকা ভাঙল! অধিবেশনে বিভিন্ন দলের বিধায়কদের অনেকেরই অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আলোচনায় শাসক দলের বিধায়কেরা অমিত মিত্রের বাজেটকে ‘উন্নয়নের বাজেট’ বলেছেন। আর বিরোধীদের বক্তব্য, ‘বাজেট দিশাহীন’। চেনা এই বাজেট-নাট্যে ‘কমিক রিলিফ’ বা কৌতুকী অবকাশ আনে কেশববাবুর গান। রসগ্রহণে বা গায়ককে প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেননি কেউ। সকলের বাহবা পেয়ে তাঁর আক্ষেপ, “ইস, আর একটু সময় পেলে আরও গান শোনানো যেত!” |