লরিয়াস পুরস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রিও দে জেনেইরো গিয়েছিলাম। স্তম্ভিত করে দেওয়া খবরটা সেখানেই প্রথম পড়ি। যে দলীয় নির্দেশ না মানার শাস্তি হিসাবে ওয়াটসনদের চার জনকে মোহালি টেস্টে সাসপেন্ড করেছে অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট!
ভিতরের খুঁটিনাটি জানা না থাকলে এই ধরনের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। তবে আমি কিছুতেই মানতে পারব না স্রেফ এই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার জেরে এত কড়া একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, দলীয় আদেশ অমান্য বা শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোটখাটো ঘটনা কিছু দিন থেকেই ঘটছিল। সেগুলো যোগ হতে হতে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে কোচ এবং ক্যাপ্টেনের পক্ষে বিষয়টাকে আর না বুঝে করে ফেলা ভুল বা কুঁড়েমি বলে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই টিম ম্যানেজমেন্ট এমন একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার ফল কিন্তু গুরুতর হতে বাধ্য।
যা ঘটেছে তাতে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা চূড়ান্ত হতাশ। বিরক্তও। খুব সঙ্গত ভাবেই তারা চায়, বিখ্যাত ব্যাগি গ্রিন মাথায় দেশের সেরা এগারো ক্রিকেটারই মাঠে নামুক। ব্যাগি গ্রিন, যা আমাদের দল এবং আমাদের ক্রিকেটীয় মূল্যবোধের প্রতীক। দুঃখের কথা, মোহালিতে সেটা হবে না। অস্ট্রেলিয়া এমনিতেই সিরিজে ০-২ পিছিয়ে রয়েছে। তার উপর দলের মধ্যে এত তোলপাড় ঘটে যাওয়ায় আমার তো ভয় হচ্ছে, সিরিজের স্কোরলাইন না শেষে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ০-৪ দাঁড়ায়। সেটাও কিন্তু কম বিপর্যয়ের হবে না!
যদিও আমার ভিতরের একটা অংশ অস্ট্রেলীয় টিম ম্যানেজমেন্টের তারিফ না করে থাকতে পারছে না। সিরিজে এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও ওরা যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে, সেটা প্রশংসার। একই সঙ্গে এটাও মনে হচ্ছে, গোটা ঘটনা আরও অনেক পরিণত ভাবে এবং বুদ্ধি করে সামলানো যেত। বিশেষ করে শেন ওয়াটসন দেশে ফিরে যাওয়ায় জটিলতা বেড়েছে। ওর এই আচরণের কী শাস্তি হতে পারে, সেটা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আশা করব, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া শেনের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তই নিক, সেটা পরিণত এবং সুচিন্তিত হবে। শুনছি শেনও নাকি দেশের হয়ে আর টেস্ট খেলবে কি না, ভাবছে। এটা আরও দুশ্চিন্তার খবর। ওর এখন মাথা ঠান্ডা করে ভাবা উচিত, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিজের কী উত্তরাধিকার ও রেখে যেতে চায়। আশা করি, এ ক্ষেত্রে বাস্তব বুদ্ধিরই জয় হবে।
সবথেকে হতাশাজনক হল, এমন চার ক্রিকেটার ঘটনায় যুক্ত যাদের মোহালিতে খেলা নিশ্চিত ছিল। জনসনকে তো প্রথম টেস্ট থেকেই খেলানো উচিত ছিল। অসাধারণ ফর্মে আছে। প্যাটিনসন এখন পর্যন্ত এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার। শেন শেষ সেঞ্চুরিটা মোহালিতেই করেছিল। আর মোহালি টেস্টে খোয়াজার দলে ফেরা নিয়েও কারও সন্দেহ ছিল বলে মনে হয় না। বড় কথা, অস্ট্রেলিয়া দলকে এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসী বা ঐক্যবদ্ধ, কোনওটাই দেখাচ্ছে না।
মাইকেল ক্লার্ক যে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বার তাতে অবিচল থেকে ওকে দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ওর জানা উচিত, হারানোর আর কিছুই নেই। দলের বাকিরাও জেনে গিয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কোনটা গ্রহণযোগ্য কোনটা নয়। তাতে বরং চাপ কমে পরিবেশটা অনেক বেশি খোলামেলা হয়ে ওঠাই উচিত। |